গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৩৯টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪৮৭ জন এবং আহত হন ৭১২ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৫৪, শিশু ৬৮ জন। ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৬ জন, যা মোট নিহতের ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৮ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭২ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বুধবার (০৮ মার্চ) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এই সময়ে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৭ জন আহত হয়েছে। ১৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৫ জন আহত ও ৩০ হাজার লিটার জ্বালানি তেল নষ্ট হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৬ জন (৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ), বাসযাত্রী ২১ জন (৪ দশমিক ৩১ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি আরোহী ২২ জন (৪ দশমিক ৫১ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী ১৬ জন (৩ দশমিক ২৮ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-টেম্পু) ১০১ জন (২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম-পাওয়ারটিলার-ইট ভাঙ্গার মেশিন গাড়ি) ১৮ জন (৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল আরোহী ৫ জন (১ দশমিক ০২ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরনের তথ্য জানাতে গিয়ে বলা হয়, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৮টি (৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৭৭টি (৪০ দশমিক ৩১ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি (১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ২৯টি (৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (০ দশমিক ৯১ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন জানাতে গিয়ে বলা হয়, দুর্ঘটনাসমূহের ৬৮টি (১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০১টি (৪৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১২টি (২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪৭টি (১০ দশমিক ৭০ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২ দশমিক ৫০ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-টেম্পু) ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-আলগানন-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার) ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং বাইসাইকেল ০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা তুলে ধরে বলা হয়, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭২৯টি। (ট্রাক ১৩২, বাস ৯৬, কাভার্ডভ্যান ২৪, পিকআপ ১৮, ট্রলি ২০, লরি ৩, ট্রাক্টর ১৬, ড্রাম ট্রাক ৯, তেলের ট্যাঙ্কার ১, মাইক্রোবাস ১৪, প্রাইভেটকার ২৬, অ্যাম্বুলেন্স ৫, মোটরসাইকেল ১৯১, থ্রি-হুইলার ১১৮ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৫২ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-আলগানন-পটাংগাড়ি-পাওয়ারটিলার) এবং বাইসাইকেল ৪টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, সকালে ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ, দুপুরে ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, বিকেলে ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং রাতে ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, প্রাণহানি ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ, প্রাণহানি ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৩টি দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে। ২২টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে কম মেহেরপুর জেলায়। ৩টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকায় ২৩টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে।
নিহতদের পেশাগত পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩ জন, সেনা সদস্য ২ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৬ জন, পদ্মা ব্রিজের চীনা প্রকৌশলী ১ জন, সাংবাদিক ৩ জন, আইনজীবী ৪ জন, কৃষি কর্মকর্তা ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১২ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৩ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৯ জন, পোশাক শ্রমিক ৬ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৬ জন, সিরামিক ২ জন, গাছ কাটা শ্রমিক ৫ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১৪ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রসহ সারা দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।