প্রভাবশালী কমান্ডারকে আটকের পর ত্রিপোলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষ

উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির একটি সশস্ত্র উপদলের প্রভাবশালী কমান্ডার প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর এই সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

এদিকে ত্রিপোলিতে ছড়িয়ে পড়া এই সংঘর্ষকে কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর হাতে দেশটির শক্তিশালী এক সশস্ত্র উপদলের কমান্ডার আটক হওয়ার পর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

সোমবার গভীর রাতে ফুর্নাজ এলাকার এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘আমরা এখন প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে গুলির শব্দ শুনছি এবং আমরা জানি না কি হবে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত।’

আল জাজিরা বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ওই সেনা কমান্ডারের নাম মাহমুদ হামজা। তিনি ৪৪৪ ব্রিগেডের প্রধান এবং এই ব্রিগেডটি ত্রিপোলির বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। স্থানীয় মিডিয়া এবং ৪৪৪ ব্রিগেডের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাহমুদ হামজাকে সোমবার মিটিগা বিমানবন্দরে আটক করে স্পেশাল ডিটারেন্স ফোর্স নামে একটি বাহিনী।

লিবিয়ার বাস্তবতায় এই দু’টি বাহিনীই বেশ শক্তিশালী এবং রাজধানীতে সবচেয়ে শক্তিশালী এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যেকোনও ধরনের লড়াই উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এছাড়া সোমবারের এই সংঘর্ষকে ইতোমধ্যেই গত কয়েক মাসের মধ্যে ত্রিপোলিতে হওয়া সবচেয়ে খারাপ লড়াই বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তর-পশ্চিম লিবিয়ার অন্যান্য অংশেও সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১১ সালের ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের পর থেকে লিবিয়ায় শান্তি বা নিরাপত্তা খুব সামান্যই বিরাজ করছে এবং ২০১৪ সাল থেকে যুদ্ধরত দলগুলোর মধ্যে লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ কার্যত পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে যায়। অবশ্য ২০২০ সাল থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও দেশটিতে কোনও ধরনের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের কোনও লক্ষণ নেই।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ত্রিপোলির পার্শ্ববর্তী আইন জারা শহরে সংঘর্ষ চলছে এবং সশস্ত্র যোদ্ধারা সেখানকার একটি প্রধান রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।

ত্রিপোলি শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মিটিগা বিমানবন্দরের বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর এই বিমানবন্দরে আসা এবং এখান থেকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত সকল ফ্লাইটকে ১৮০ কিলোমিটার (১১০ মাইল) পূর্বে মিসরাতাতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সমর্থনপুষ্ট এক গণঅভ্যূত্থানে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি উৎখাত হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। মূলত গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই উত্তর আফ্রিকার দেশটি চরম রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে।

আর সেই সংকট এখনও অব্যাহত রয়েছে।

 

Related Posts

Next Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms below to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.