পেশায় একজন রিকশাচালক খলিল মিয়া। নিজের সহায়-সম্পত্তি বলতে কিছু নেই। পরিবার নিয়ে থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। ছেলের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।
১০টি বছর সন্তানকে শিকলবন্দি করে রাখতে হচ্ছে খলিল মিয়াকে। ছেলেকে এ থেকে পরিত্রাণ দিতে তার প্রয়োজন প্রায় ১২ লাখ টাকার। অর্থাভাবে থেমে আছে ছেলের চিকিৎসা।
খলিল মিয়ার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের ভলাকুট গ্রামে। বর্তমানে বসবাস করেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরে। স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
সম্প্রতি একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসী থেকে চাঁদা তুলে। ছোট ছেলে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বড় ছেলে রবিউলকে (১৮) শিকলবন্দি করে ঘরে বেঁধে রাখতে হয়। পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসাও করাতে হয়। তবে রিকশা চালিয়ে আয় করা সামান্য অর্থে পরিবারের খরচ ও বড় ছেলে রবিউলের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন খলিল মিয়া।
খলিল মিয়া জানান, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সুখেই দিন কাটছিল। গ্রামে বাড়িতে সামান্য জমিও ছিল। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে বসবাস করতেন। বড় ছেলে রবিউল সেখানে স্কুলে পড়াশোনা করতো। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সে একদিন স্কুল থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বাসায় ফিরছিল। পথে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে খেলছিল তারা। খেলার একপর্যায়ে দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রবিউলের মাথার পেছনের দিকে রডের অংশ ঢুকে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
চিকিৎসার পর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে থাকে রবিউল। কিন্তু এই ঘটনার পাঁচ মাস পর সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রবিউলকে আরও উন্নত চিকিৎসা করানো হয়। তবে ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে বাড়িঘর ও শেষ সম্বল সামান্য জায়গাটুকুও বিক্রি করে দিতে হয়েছে খলিল মিয়াকে। এমনকী আর কিছু না থাকায় ঘরের থালাবাসনও বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
খলিল মিয়া বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবে রবিউল। এজন্য প্রয়োজন প্রায় ১২ লাখ টাকা। যেখানে রিকশা চালিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে কোথায় পাবো এত টাকা!’
ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া বলেন, ‘খলিল মিয়া ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে ফিরে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার কোনো সহায়-সম্পদ বা মাথাগোঁজার মতো জায়গা ছিল না। বিষয়টি আমাকে জানালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিতে সহায়তা করি। কিন্তু খলিল মিয়া ছিলেন সিলেটের ভোটার। আমি নিজ উদ্যোগে তাকে ভলাকুট ইউনিয়নের ভোটার করি। তারপর আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সে জানায়, তার ছেলে প্রতিবন্ধী। আমি বলেছি, তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে সহায়তা করা হবে।’
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা রাকেশ পাল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ছেলে দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি। বিষয়টি কয়েকদিন আগে আমি জেনেছি। ছেলেটি যেন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।