ছেলের কিস্তির টাকা না পেয়ে বৃদ্ধ বাবার ভ্যান কেড়ে নিল এনজিওকর্মী

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে ছেলের কিস্তির টাকা না পেয়ে বৃদ্ধ বাবার পাখিভ্যান কেড়ে নিয়ে গেছে আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মাঠকর্মী ফারিহা। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত দুই মাস আগে নারায়ণপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার ভ্যানচালক আব্দুল করিমের ছেলে লিটন আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টার থেকে ৬০ হাজার টাকা লোন তোলেন।

লিটনের বোন বলেন, দুই মাস আগে আমার ভাই ও তার স্ত্রী আসমা ৬০ হাজার টাকা লোন নেন। ভাই অসুস্থ হয়ে বর্তমানে ঢাকায় আছেন। এ কারণে কিস্তির টাকা দিতে পারেননি। আমার মা নেই। বাবা আমার কাছেই থাকেন। ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসারে সহযোগিতা করেন। আমার বাবা লোনের জামিনদার ছিলেন। এজন্য ওই এনজিওকর্মী (ফারিহা) আমার বাবার পাখিভ্যানটা কেড়ে নিয়েছেন।

লিটনের বাবা আব্দুল করিম বলেন, আমার ছেলে লোন নিয়েছিল। সেখানে আমি স্বাক্ষর করেছিলাম। ওই এনজিওকর্মী একদিন আমার বাড়িতে এসে বলেন, ‘আপনি স্বাক্ষর করেছেন, টাকা আপনাকেই দিতে হবে।’ আমি বলেছি, আমার ভ্যান ছাড়া কিছু নেই। রোববার আমার ভ্যানটা তিনি কেড়ে নিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মাঠকর্মী ফারিহা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি ভ্যানটি নিয়ে আমার বাড়িতে রেখেছি। আমাদের অফিসের টাকা দিয়েই এই ভ্যানটি কিনে দেওয়া হয়েছে। তাই ভ্যানটি নিয়ে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, গত দুই মাস আগে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ভ্যান কিনে দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তি দেওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত তিনটা কিস্তি দিয়েছেন। বাকি কিস্তি না দেওয়ায় ভ্যান নিয়ে এসেছি। বিষয়টি আমার অফিসের ম্যানেজারও জানেন।

জীবননগর শাখার আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গতকাল বিকেলে প্যাখিভ্যান চালকের নাতি এসে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি ভ্যান নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। তারপর আর তিনি আসেননি।

গ্রাহকের টাকা না পেয়ে তার বাবার ভ্যান নিয়ে আসা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মোটেও ঠিক হয়নি।

আদ-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মহাব্যবস্থাপক মো. মোক্তার হোসেন বলেন, আমার জানামতে আমার কোনো কর্মী এমন ঘটনা ঘটাবেন না। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। ঘটনার সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ডা. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, এই ঘটনাটি আপনার (প্রতিবেদক) নিকট থেকেই শুনলাম। কেউ এ ধরনের কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি গরিব মানুষের সহায়সম্বল নিয়ে আসাটা অমানবিক। দেশে প্রচলিত আইন আছে। সেই আইন মোতাবেক যদি কারোও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাহলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারে। সহায়সম্বল নিয়ে এভাবে টানাহেঁচড়া করাটা মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ভুক্তভোগীর আইনের দারস্থ হওয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ভুক্তভোগী যদি মনে করেন এই কাজের কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাহলে আইনের দারস্থ হবেন এবং বাকিটা আদালত দেখবেন।

Related Posts

Next Post

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms below to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.