বিএনপির আগাগোড়া পুরোটাই দুনীর্তিগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল ওবায়দুল।
শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি মির্জা ফখরুল সংসদে যান, তাহলে তারেকের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যাবে। এ রকম একটা সাইকোলজি থেকে ফখরুলকে পার্লামেন্টে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভালো মানুষ সাজানোর জন্য মির্জা ফখরুল একটা বিবৃতি দিয়ে দিয়ে বসলেন। তিনি তাদের নির্বাচিত ছয়জনকে সংসদে পাঠালেন। এখন যদি ফখরুল সংসদে যায় তাহলে তারেকের ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে যাবে। এ রকম একটা সাইকোলজি থেকে ফখরুলকে পার্লামেন্টে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছে তারেক রহমানের একটা ধমক।
তিনি বলেন, ফখরুল নিজেই তো স্বাধীন নন। তার দলে কোনো পর্যায়ে কোনো সম্মেলন হয় না, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। তারেক রহমান বিদেশে থাকলে বিএনপি স্বাধীন সত্তা নিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে পারবে, সেটি আমরা বিশ্বাস করি না।
তিনি আরও বলেন, এখন দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। বিএনপির টপ টু বটম সবাই দুর্নীতিবাজ। এই দলের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া টপ টু বটম দুর্নীতির বরপুত্র।
বিএনপি যদি নির্বাচনে আসতো গতবারের মতো ফলাফল হতো না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির কারণে অপজিশনের একটা ভোট ছিল। কিন্তু তারেক রহমান মনে করে যদি… এই অবস্থায় বিএনপি ভালো করে, এটার সুফল তো আমি পাচ্ছি না। তারেক রহমান তো পাচ্ছে না। এখন তার অনুপস্থিতিতে অন্য কেউ নেতা হবে। ফখরুল সাহেব নিজেও অনুধাবন করতে পারছেন যে, তাকে কীভাবে তারেকের ধমকের ওপর চলতে হয়। এখন বলেন তাকে (তারেক রহমান) শাস্তি দেওয়া যাবে না। শাস্তি তিনি তো পেয়েছেন, নতুন করে দেওয়ার কী আছে? এফবিআই ঢাকা এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে ট্যাক্স ফাঁকি, অর্থ পাচারের। সেই মামলার রায় হয়েছে। দেশের আদালত, বিচারব্যবস্থা বিএনপির বিরুদ্ধে গেলে তাদের নেতারা বিচারও মানে না, বিচার ব্যবস্থা মানে না, আইন মানে না, আইনের শাসন তারা মানতে চায় না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, অস্ত্র, দুর্নীতির মামলায় তারেকের সাজা হয়েছে। তারেকের আর কত সাজা হবে? তার তো সাজা হয়েছে। শাস্তি হয়ে গেছে, এখন তাকে শাস্তি ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাকে ভালো মানুষ সাজানোর চেষ্টা করার কোনো কারণ নেই।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্র থেকে ৭ ধারা হঠাৎ করে এক কলমের খোঁচায় বাদ দিয়েছে। কারণ কি? কারণ হলো যে, ওই ৭ দফায় আছে, দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বিএনপির কেউ নেতা হতে পারবে না। ওই ৭ ধারায় আছে যে, দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তি বিএনপির নেতা হতে পারবে! ফখরুল তাকে ভালো মানুষ সাজাচ্ছেন তাহলে ধারাগুলো বাদ দিলেন কেন? দুর্নীতিবাজের যে ধারা, আর দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির যে ধারা… সেটিতে তারেক রহমান দোষী হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য হঠাৎ করে তারেকের নির্দেশে এক কলমের খোঁচায় বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশনে এনে জমা দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই বর্নচোরারা গণতন্ত্রের নামে যতদিন এ বাংলাদেশে আছে, এরা এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শ মানে না। এরা এ দেশের গণতন্ত্রকে গিলে খেয়েছে। এরা এ দেশে লুটপাট করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশকে অন্ধকার গহ্বর থেকে উদ্ধার করে আজকে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা, অর্থনীতির অগ্রযাত্রা,মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা চেতনা বিকাশের অগ্রযাত্রার সাফল্য ফিরিয়ে এনেছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা আজকে এসব কথা বলে অন্ধকারে ঢিল ছোড়েন, ১৫ বছর আগে বাংলাদেশ কেমন ছিল? বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন ছিল? আর ১৫ বছর পরে কেমন হয়েছে? আমাদের ভুলত্রুটি আছে এটা আমরা স্বীকার করে নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অতীতের ভুল ত্রুটি থেকে আমরা শিক্ষা নেব।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে কত সন্ত্রাসী ছিল? দুর্নীতিবাজ বেনজীরের জায়গায় কোহিনূর, আশফারুল হুদা এইসব লোককে আইজিপি বানানো হয়েছিল। এদের দুর্নীতির গল্প শুনলে শিউরে উঠতে হয়। বিচার কী হয়েছে? বিএনপির নেতারা জনে জনে দুর্নীতি করেছিল, লুটপাট করেছিল। তার বিচার কী হয়েছিল? বিএনপি কী তাদের কোনো নেতার বিচার করার সৎ সাহস দেখাতে পেরেছে, যেটা শেখ হাসিনা করে দেখিয়েছেন।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততা, এটা কে বের করেছে, পুলিশ? পুলিশ কোন সরকারের। এটা কি বিএনপির আমলের পুলিশ? না শেখ হাসিনার আমলের পুলিশ। ডিবি ব্যাপারটা উদঘাটন করেছে। মামলা হওয়ার আগে এবং মামলার শাস্তি হওয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী কাউকে অপরাধী বলা যাবে না। ওই সৎ সাহস আওয়ামী লীগের আছে। জেলার জেনারেল সেক্রেটারি রিমান্ডে, এই রকম উদাহরণ তো বিএনপির আমলে, এরশাদের আমলে নেই। ছিল না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম ও উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ অন্যান্য নেতারা।