রাজনীতির উত্তরাধিকার-এ ধারা সারা বিশ্বেই প্রচলিত। বাংলাদেশেও রেওয়াজটা দীর্ঘদিনের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসাবে নিজ দক্ষতা-মেধায় গণমানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী তিনি।
অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি হিসাবে রাজনীতিতে এসেছেন খালেদা জিয়া, তিনবার হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুজনই দীর্ঘদিন দলের শীর্ষ পদে থেকে দক্ষতার সঙ্গে সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করছেন। বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তরুণ নেতাদের অনেকেই উত্তরাধিকার হিসাবে রাখছেন যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের নজর কাড়ছেন।
পূর্বসূরিদের পথেই নতুন প্রজন্ম হাসিবুল হাসান
দেশে রাজনীতির অঙ্গনে পূর্বসূরিদের পথেই হাঁটছেন আওয়ামী লীগের নতুন প্রজন্ম। তাদের অনেকেই ইতিবাচক কাজের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছেন আলোচনায়। সামলাচ্ছেন দলের পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। অনেকে আবার বড় বড় পদ-পদবিতে থাকলেও পূর্বসূরিদের মতো আলো ছড়াতে পারেননি। আবার অনেকেই আছেন রাজনীতি থেকে দূরে। এদের অনেকেই দাদা-বাবার পথ ধরে রাজনীতিতে এলেও দূরেও সরে গেছেন। স্বামীর পরে রাজনীতিতে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বেশ কয়েকজন প্রয়াত নেতা-এমপির স্ত্রীও।
এলাকার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অভিযোগও রয়েছে কারও কারও বিরুদ্ধে। কেউ কেউ আবার পিতার আদর্শ থেকে সরে অন্য ধারার রাজনীতিতেও যুক্ত হয়েছেন। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরাও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অন্যদের সন্তানরাও এ পথে এসেছেন। তাদের অনেকেই কিন্তু ভালো করছেন।
তিনি আরও বলেন, তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে রাজনীতি করতে হবে তা তো নয়। আর তাছাড়া সবাই যে রাজনীতিতেই থাকবেন তা কিন্তু নয়। তাদের পছন্দের পেশা থাকতেই পারে। দলের হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থেকেই নতুন প্রজন্মের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তেমনই একজন নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ আসনের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তার পিতা আব্দুর রৌফ চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ছাত্রলীগেই তার রাজনীতির শুরু।
এরপর খালিদ মাহমুদ চৌধুরী একাধিবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিচ্ছন্ন ইমেজের এ রাজনীতিবিদ পিতার মতোই এলাকার মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রেখেছেন। তিনি এলাকাতে বেশ জনপ্রিয়। হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের এমপি মাহবুব আলী। তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী। তার পিতা আছাদ আলী ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং তৎকালীন পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য।
ভূমিমন্ত্রী এবং চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। তিনি চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী এলাকার মানুষের কাছে ভীষণ প্রিয়। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। রাসেল রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। এলাকার মানুষের জন্যও তিনি অনেক সময় দেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বর্তমানে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক। নবম জাতীয় সংসদ থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে বাবার মতো রাজনীতিতে এখনো আলো ছড়াতে পারেননি তরুণ এ নেতা।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বর্তমানে সংসদ সদস্য। জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক জনও রাজনীতিতে বাবার মতো দ্যুতি ছড়াতে পারেননি।
বাংলাদেশের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পাঁচ সন্তানের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ও পরিচিত নাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ছিলেন।
তার মৃত্যুর পর সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি সৈয়দ আশরাফের আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনিও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের সদস্যদের সিমিন হোসেন রিমি রাজনীতিতে সক্রিয়। দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি। তবে বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো পদে নেই।
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর এম মনসুর আলীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে সংসদে আছেন তার নাতি তানভীর শাকিল জয়। জয়ের বাবা প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিম। তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক ছিলেন।
মন্ত্রী হিসাবে মোহাম্মদ নাসিম গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সামলেছেন দক্ষ হাতে। তার সন্তান শাকিল জয় ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর বাবার মৃত্যুর পর আবার তার আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জয় এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তিনি এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। দাদা-বাবার মতো নিজ নির্বাচনি এলাকাতে তিনিও জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানের ৬ সন্তানের মধ্যে রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় খায়রুজ্জামান লিটন। লিটন প্রায় এক যুগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার অন্য ভাইবোনেরা কেউই রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন বাবার আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের তিন ছেলের মধ্যে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিফ কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। মো. আবদুল হামিদের অন্য ছেলেও রাজনীতিতে সক্রিয়।
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডলের ছেলে আবদুল মমিন মণ্ডল (সিআইপি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি রাজশাহী বিভাগের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। তরুণ এ নেতা এলাকামুখী। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন তিনি এলাকায় থাকেন।
নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ (মিলাদ গাজী)। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী সাবেক মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে। রাজনীতিতে এখনো বাবার মতো হতে না পারলেও এলাকায় তিনি পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত।
কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজি মোহাম্মদ ফখরুল। তার পিতা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মুনশী কুমিল্লা-৪ আসনের সাবেক এমপি এবং উপমন্ত্রী ছিলেন। রাজি মোহাম্মদ ফখরুল প্রতি মাসে একাধিকবার এলাকায় যান।
এদিকে স্বামীর পরে রাজনীতিতে এসেছেন অনেক প্রয়াত নেতার স্ত্রী। স্বামীর পরে এমপি হয়েছেন ওই সংসদীয় এলাকার। অনেকেই আবার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন-আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বগুড়া আসনের সাবেক এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রয়াত নেতা সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী সুনামগঞ্জ-২ আসনের এমপি জয়া সেনগুপ্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আবদুল মোমিনের স্ত্রী রেবেকা মোমিন।
রাজনীতিতে বদনাম না থাকলেও বয়সের কারণে তাদের অনেকেই রাজনীতিতে বেশি সময় দিতে পারেন না। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা ও সংসদ সদস্য এমন আরও বেশ কয়েকজনের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য সংরক্ষিত আসনের এমপি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির দুই ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান এবং তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র। তাপস এর আগে ঢাকা-১০ আসনের এমপি ছিলেন। বরিশালের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ, গণপরিষদের সাবেক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী। তার বড় ছেলে মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর ই আলম চৌধুরী। ছোট ছেলে মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য।
আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (একেএম শামসুজ্জোহা) আওয়ামী লীগের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য। তার দুই পুত্র সেলিম ওসমান (জাতীয় পার্টি) ও শামীম ওসমান (আওয়ামী লীগ) একাদশ জাতীয় সংসদের নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি। তার আরেক সন্তান প্রয়াত নাসিম ওসমানও জাতীয় পার্টি থেকে চারবারের এমপি ছিলেন। বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন। তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি।
আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা-৯ আসনের সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেনের ছেলে আহসানুল ইসলাম টিটু টাঙ্গাইল-৬ আসনের এমপি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ও তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ ও ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শামসুল হকের ছেলে শরীফ আহমেদ ময়মসিংহ-২ আসনের এমপি।
তিনি বর্তমান সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আলতাব হোসেন গোলন্দাজের ছেলে ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল ময়মনসিংহ-১০ আসনের এমপি। দিনাজপুরের সাবেক এমপি এম আব্দুর রহীমের ছেলে ইকবালুর রহীম একাদশ জাতীয় সংসদে দিনাজপুর-৩ আসনের এমপি।
দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুর ছেলে শিবলি সাদিক বর্তমানে ওই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি। আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি।
পাবনার সাবেক সংসদ সদস্য আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে আহমেদ ফিরোজ কবির পাবনা-২ আসনের এমপি। সাবেক সংসদ সদস্য এমএম নজরুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ভোলা-৪ আসনের এমপি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নের তিনবারের এমপি পানিসম্পদ এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য করিম উদ্দিন আহমেদের ছেলে লালমনিরহাট-২ আসনের এমপি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এখলাস উদ্দিন আহমদের ছেলে কবিরুল হক নড়াইল-১ আসনের এমপি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের বড় ছেলে আজিজুস সামাদ ডন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এছাড়া আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা, পারভীন জামান কল্পনা, সাঈদ খোকনসহ আরও বেশ কয়েকজন দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন।
পাশাপাশি বাবা আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন এমন অনেকেই দলের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের অনেকে টিকে থাকলেও অনেকেই আবার পরবর্তীতে মনোনয়ন বঞ্চিতও হয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও মন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াসহ আরও বেশ কয়েকজন আবার পিতার আদর্শ ছেড়ে ভিন্নধারার রাজনীতিতেও যুক্ত হয়েছেন।
নজর কাড়ছেন অনেকেই হাবিবুর রহমান খান
বিএনপির রাজনীতিতে উত্তরসূরি হিসাবে অনেকেই নজর কাড়ছেন। এরই মধ্যে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন তারা। জাতীয় ও দলীয় রাজনীতিতে হয়ে উঠেছেন পরিচিত মুখ। চেষ্টা করছেন পূর্বসূরিদের সুনাম ধরে রাখার। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
অনেকেই উত্তরাধিকারী হিসাবে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারছেন না। কেউ কেউ রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে রয়েছেন নিষ্ক্রিয়। তাদের রাজনীতি অনেকটা নির্বাচনে মনোনয়ন কিংবা কমিটিতে পদ পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নির্বাচন এলেই তাদের তৎপরতা দেখা যায়। নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দেখা যায় দৌড়ঝাঁপ। এর বাইরে দলীয় কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা ততটা চোখে পড়ছে না।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। যোগ্যতার বদলে উত্তরাধিকার সূত্রেই অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ কিংবা দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান। ফলে তারা দলীয় কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছেন না। তবে অনেকেই ভালো করছেন। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তারা আস্থা তৈরি করেছেন। আরও ভালো কিছু করতে দলীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে প্রয়াত নেতাদের ছেলেমেয়ে কিংবা স্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়। দলে কিংবা রাজনীতিতে ন্যূনতম ভূমিকা না থাকার পরও ৩৬ জন উত্তরাধিকারকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
শুধু বাবা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন কিংবা আছেন-এ যোগ্যতায় তাদের পদ দেওয়া হয়েছে বলে তখন দলে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। হাইকমান্ড থেকে তখন বলা হয়েছিল, উত্তরাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করে পদ দেওয়া হয়নি। দলে তরুণ নেতৃত্বের কথা বিবেচনা করেই তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে।
ভবিষ্যতে তারা নিজেদের ত্যাগ ও যোগ্যতা দিয়ে দলীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নেবেন। এছাড়া কমিটির বাইরেও অনেকেই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর সেই শূন্যস্থান পূরণে রাজনীতিতে আসছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, উত্তরসূরি হিসাবে বিএনপির রাজনীতিতে অনেকেই নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। রাখছেন যোগ্যতার স্বাক্ষর। উত্তরসূরি হিসাবে ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন তরুণ নেতা তাবিথ আউয়াল।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ। বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরেই সক্রিয় হন বিএনপির রাজনীতিতে। ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতা হিসাবে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন তিনি। মেধাবী হিসাবে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ে জায়গা করে নিয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির এ সদস্য।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির দলীয় মনোনয়নও পেয়েছেন। জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল যুগান্তরকে বলেন, দেশের জন্য কিছু করার মানসিকতা নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি। চেষ্টা করছি কিছু করার। ভবিষ্যতেও দল ও দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি ও জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। তার ত্যাগ ও যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তার মৃত্যুতে বিএনপির রাজনীতিতে হাল ধরেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে বাবার শূন্যস্থান পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অল্পদিনেই নেতাকর্মীদের কাছে আস্থার জায়গা হয়ে উঠেন ইশরাক। দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও রেখে চলেছেন যোগ্যতা ও ত্যাগের স্বাক্ষর।
বাবার দেখানো পথেই যে কোনো বিপদে নেতাকর্মীদের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। বিগত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় তাকে। সেই নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের নজর কাড়েন তরুণ এই নেতা। দলীয় রাজনীতি ছাপিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও এখন পরিচিত মুখ ইশরাক।
জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ছোটবেলা থেকে রাজনীতিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। দল ও দেশের জন্য বাবা জীবনের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই দেশ এবং মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা পেয়েছি। আজ বাবা নেই। তার দেখানো পথেই কিছু করার চেষ্টা করছি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করব। সফল কিংবা ব্যর্থ, সেটা মূল্যায়ন করবে জনগণ।
কুমিল্লার নেতারা জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিদেশ থেকে পড়ালেখা শেষ করে নিজ এলাকা কুমিল্লার দাউদকান্দিতে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৬ সালের কাউন্সিলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। জাতীয় রাজনীতির চেয়ে এলাকার রাজনীতিতে বেশি মনোযোগী এই তরুণ নেতা। সেখানকার বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি।
জানতে চাইলে মারুফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিদেশ থেকে পড়ালেখা শেষ করেই এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয় হই। নেতাকর্মীদের জামিন করানো থেকে যে কোনো সমস্যায় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। স্থানীয় রাজনীতির পাশাপাশি উচ্চ আদালতে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা মোকাবিলায়ও অবদান রাখছি।
তিনি বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। দেশের রাজনীতিতেও তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বাবার আদর্শ এবং বিএনপির রাজনীতিকে পুঁজি করে দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
উত্তরাধিকার হিসাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ছেলের বউ নিপুণ রায় চৌধুরীও যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। কয়েকবার কারাগারেও গিয়েছেন।
শুধু তাবিথ আর ইশরাক নন, উত্তরসূরি হিসাবে আরও কয়েক তরুণ নেতা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। বাবার সুনাম ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, মীর নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর হেলাল, অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা, সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন, এসএ খালেকের ছেলে সৈয়দ সিদ্দিক সাজু, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায়, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুকের মেয়ে তামান্না ফারুক, সাবেক মন্ত্রী মানিকগঞ্জের এম শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মইনুল ইসলাম খান শান্ত, বিচারপতি টিএইচ খানের ছেলে আফজাল এইচ খান, সাবেক হুইপ প্রয়াত জাহেদ আলী চৌধুরীর ছেলে ফাহিম চৌধুরী, সাবেক এমপি আবদুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফ প্রমুখ।
দলের সিনিয়র একাধিক নেতা উত্তরাধিকার সূত্রে যারা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকের বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। কারণ তাদের অনেকেই পূর্বসূরিদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারছেন না। দলীয় নেতাকর্মীরা কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে তারা কোনো গ্রহণযোগ্যতাই তৈরি করতে পারেননি। উলটো রাজনীতির মাঠ থেকে তারা নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছেন।
বিএনপির আন্দোলন কিংবা অসহায় নেতাকর্মীদের পাশে তাদের দেখা যাচ্ছে না। তারা বলেন, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মানবতাবিরোধী অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। সাকা চৌধুরীর কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে তার যথেষ্ট পরিচিতি ছিল। তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়।
কিন্তু দলীয় রাজনীতিতে তার কোনো ভূমিকা নেই। সাকার ছেলে হিসাবে একটা পরিচিতি থাকলেও দলে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারছেন না। বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় তিনি। তবে নির্বাচনের সময় তার বা তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ে। প্রায় একই অবস্থা বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহের উত্তরাধিকারীদেরও।
হান্নান শাহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। দলীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। দলের ত্যাগী ও নিবেদিত নেতা হিসাবে সবার মন জয় করেন। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ২০১৬ সালে তিনি মারা যান। কিন্তু তার উত্তরাধিকাররা রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। বাবার মৃত্যুর পর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
কিন্তু গত কয়েক বছরে যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে প্রমাণ দিতে পারেননি। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে হান্নান শাহের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। দলীয় রাজনীতিতে তাকে তেমনটা দেখা যায় না। তবে জাতীয় নির্বাচন কিংবা গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কমিটি গঠনে তার তৎপরতা দেখা যায়।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন একজন দক্ষ ও ঝানু রাজনীতিবিদ। বিএনপির মহাসচিব হয়ে ওয়ান-ইলেভেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। সবার কাছে ত্যাগী ও নিবেদিত নেতা হিসাবে পেয়েছেন সম্মান ও শ্রদ্ধা। কিন্তু মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা সেই ধারা ধরে রাখতে পারছেন না।
তার দুই ছেলে খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবুল ও খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু বিএনপির রাজনীতি করছেন। কিন্তু বাবার সুনাম বা ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেননি। তাদের রাজনীতি অনেকটা মনোনয়নকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়াই যেন তাদের কাছে মুখ্য বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা। পাশাপাশি জেলার কমিটিতে নিজেরা কিংবা তাদের অনুসারীদের পদ পাইয়ে দিতেই তৎপরতা দেখা যায়। এর বাইরে দলীয় রাজনীতিতে তাদের সক্রিয়তা চোখে পড়ে না। এদের ছাড়াও আরও কয়েক নেতা রয়েছেন, যারা বাবার বদৌলতে দলে পদ পেয়েছেন। কিন্তু পদ পাওয়ার পর তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে আর দেখা যায়নি।