কাই মসলিন পুনরুদ্ধার করে পদক পাচ্ছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীন বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প। এ রকম বিভিন্ন কাজের জন্য এবার মোট ৩২ জন সরকারি কর্মকর্তা (দলগত মিলিয়ে) এবং তিনটি প্রতিষ্ঠান জনপ্রশাসন পদক পাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ এর অনুষ্ঠান উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এই পদক দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর দিবসটি ২৩ জুলাই পালন করা হলেও করোনার সংক্রমণ ও ঈদের ছুটির কারণে এবার নির্ধারিত তারিখে তা পালন করা যায়নি। গত বছরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়নি। এবার ২০২০ এবং ২০২১ সালের জনপ্রশাসন পদক একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন। এর মধ্যে গত ৭ জুন পর্যন্ত সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারে মোট কর্মকর্তা ৬ হাজার ৩০৬ জন। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এর ফলে অনেকের ভালো কাজ আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা জানালেন, বর্তমানে অসংখ্য কর্মকর্তা খুব ভালো কাজ করছেন। কিন্তু কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সবাইকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এ জন্য দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন নীতি কঠোরভাবে প্রতিপালন করা দরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে (সাধারণ ক্ষেত্র) জনপ্রশাসন পদক-২০২১ পাচ্ছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জিয়াউর রহমান। তিনি মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করার কাজের জন্য এই পদক পাচ্ছেন। ইউনেসকোতে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক তৎপরতার জন্য দলগত শ্রেণিতে (সাধারণ) পদক পাচ্ছেন প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেসকোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ও তাঁর দল। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে এই পদক পাচ্ছে বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প।
এ ছাড়া পরিবার পরিচিত কাডের জন্য ব্যক্তিগত (কারিগরি ক্ষেত্র) শ্রেণিতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজের জন্য দলগত (কারিগরি) শ্রেণিতে যৌথ মূলধন কোম্পানি বা ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের তৎকালীন নিবন্ধক (বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচারসচিব) মো. মকবুল হোসেন ও তাঁর দল এবং পেনশন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে (কারিগরি) অর্থ বিভাগ এই পদক পাচ্ছেন।
জেলা পর্যায়ে পঞ্চগড়ের সাবেক জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন (ব্যক্তিগত) এবং দলগত শ্রেণিতে খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ও তাঁর দল এই পদক পাচ্ছেন। এর মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন কন্যারত্নের জন্য এবং হেলাল হোসেন ও তাঁর দল বানীশান্তা যৌনপল্লিতে জন্ম নেওয়া সমাজচ্যুত শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য এই পদক পাচ্ছেন।
জনপ্রশাসক পদক ২০২০ পাচ্ছেন দলগত শ্রেণিতে ‘মাতৃমৃত্যু মুক্ত কাপাসিয়া মডেল’ এর উদ্ভাবক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও তাঁর দল। এ ছাড়া ওই বছরের জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে পদক পাচ্ছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসনের জন্য তিনি এই পদক পাচ্ছেন। দলগত শ্রেণিতে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর রশীদ ও তাঁর দল পিপিপি অনুসরণ করে আধুনিক মানের সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম ও মিনি লাইব্রেরি স্থাপনের জন্য এবং টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক (বর্তমানে ঢাকার ডিসি) মো. শহীদুল ইসলাম ও তাঁর দল টাঙ্গাইলে বধ্যভূমি সংস্কার ও নবরূপে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য এই পদক পাচ্ছেন। একই বছর প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে হাটহাজারী ইউএনও কার্যালয় এই পদক পাচ্ছে।