২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর ওই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে মূল সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের কয়েকটি পরিবর্তিত ধরনের আবির্ভাব ঘটে। গ্রীক বর্ণমালা অনুসারে এই ধরনসমূহের নাম রাখা হয় আলফা, বেটা, গ্যামা, ডেল্টা, ল্যাম্বডা, কাপ্পা প্রভৃতি।
বর্তমানে করোনার অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রকোপে বিশ্ব কাঁপছে; এরই মধ্যে ফ্রান্সের করোনা মোকাবেলা বিষয়ক সরকারি টাস্কফোর্সের শীর্ষ পরামর্শক ও দেশটির সরকারি বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান জেন ফ্রাঙ্কোইস ডেলফ্রেইসি জানিয়েছেন চলতি বছর করোনার আরও একটি পরিবর্তিত ধরন আগমনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম বিএফএম নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেন ফ্রাঙ্কোইস ডেলফ্রেইসি বলেন, ‘করোনার আর একটি পরিবর্তিত ধরন আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চলতি বছর শীতেই আসতে পারে ধরনটি।’
করোনার পরিবর্তিত ধরনসমূহের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রামক ও প্রাণঘাতী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ডেল্টা। অনাগত নতুন সেই ধরনটি ডেল্টার থেকে শক্তিশালী হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন জেন ফ্রাঙ্কোইস ডেলফ্রেইসি। তবে তিনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসের অভিযোজনের ক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে।
ফ্রান্সের জনগণকে সামাজিক দূরত্ববিধি ও মাস্ক পরা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে ডেলফ্রেইসি বলেছেন, আগামী ২০২২ বা ২০২৩ সালে ‘সম্ভবত’ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে ফ্রান্সের জনগণ।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত- এক অংশে রয়েছে সেসব দেশ যেখানকার জনগণের বেশিরভাগ টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন, অপর অংশে রয়েছে সে দেশসমূহ যেখানকার অধিকাংশ জনগণ টিকার ডোজ পাননি।’ ‘পরবর্তী দুই বছরে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- এই দুই বিশ্বের সঙ্গে কীভাবে আমারা সহাবস্থান করব-সেই উপায় বের করা।’
ফ্রান্সে বর্তমানে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘হেলথ পাস’ চালু করেছে দেশটির সরকার। যারা টিকার ডোজ নিয়েছেন এবং করোনা টেস্টে নেগেটিভ বলে শনাক্ত হয়েছেন- তাদেরকে এই পাস দেওয়া হচ্ছে।
গত বুধবার থেকে ফ্রান্সের সিনেমা হল, যাদুঘর, সুইমিং পুল, স্টেডিয়াম – অর্থাৎ জনসমাগম হয় এমন সব জায়গায় হেলথ পাস বাধ্যতামূলক করেছে ফ্রান্সের সরকার। তবে এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছেন দেশটির অনেকেই। তাদের বক্তব্য- এই নীতির মাধ্যমে ফ্রান্সে যারা এখনও টিকা নেননি, তাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে।
করোনা মহামারিতে ইউরোপের যেসব দেশ সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম ফ্রান্স। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫১০ জন এবং মারা গেছেন মোট ১ লাখ ১১ হাজার ৫৬৫ জন।