দেশের বৃহত্তর শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে তরুণীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। ফলে এ মামলা থেকে আনভীরকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে গুলশান থানা পুলিশ। আগামী ২৯ জুলাই এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর গুলশানে বড় বোন নুসরাতের ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে গত ২৬ এপ্রিল মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ‘আত্মহত্যা প্ররোচনার’ অভিযোগ এনে বসুন্ধরার এমডিকে একমাত্র আসামি উল্লেখ করে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ। আদালতে দায়ের করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ মামলায় যাকে অভিযুক্ত করে আসামি করা হয়েছে, আদতে ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না। বসুন্ধরা এমডির বিরুদ্ধে করা মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে মনে করছেন তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, গত ১৯ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নুসরাতের মামলাটি মিথ্যা এবং বানোয়াট ছিল।
এদিকে, পুলিশের তদন্তে বসুন্ধরার এমডির সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় নতুন মোড় নিলো মুনিয়া মৃত্যুরহস্য। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। সবুজ দাবি করেন, তাঁর বোন মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে এবং হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন তাতে জড়িত। তবে আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার তদন্ত চলাকালে সবুজের আবেদনটি স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
আশিকুর রহমান সবুজ ওই মামলার আবেদন প্রসঙ্গে একাধিকবার জানিয়েছিলেন, এ ঘটনায় হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিভিন্ন সময় মুনিয়ার সঙ্গে শারুনের যোগাযোগ ছিল।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ পেয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে এ মামলায় আসামি করেছিলেন নুসরাত জাহান তানিয়া। এ মামলায় অনেক প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলায় মুনিয়ার বোন যেসব তথ্য-উপাত্ত এবং আলামত দিয়েছেন, তার অধিকাংশেরই প্রমাণ পাওয়া যায়নি পুলিশের তদন্তে। তদন্ত চলাকালে পুলিশের বিরুদ্ধেও নানা রকম কুৎসা রটানো শুরু করেন তিনি।
সূত্র বলেছে, মামলা দায়েরের পর ক্ষান্ত থাকেননি তানিয়া। হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর ইন্ধনে এবং তার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ সুবিধা নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। চিহ্নিত সরকারবিরোধী চক্র ও যুদ্ধাপরাধী সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছিলেন তানিয়া। এসব ঘটনা পুলিশের নজরে এলে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ তুলতে শুরু করেন।