ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর সড়কে গণপরিবহণ চালু থাকলেও মানুষ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। কিন্তু উল্টোচিত্রের দেখা মেলে রাজধানীর বড় বাস টার্মিনাল গাবতলীতে। রাজধানী ছেড়ে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে যারা ঈদ উদযাপনের জন্য বাড়ি ফিরতে চাইছেন, তাদের জন্য এবারের যাত্রা যেন অন্যান্যবারের সব ভোগান্তিকে হার মানিয়েছে।
মিলছে না অগ্রিম টিকিট, দিনের টিকিট কাউন্টারগুলোতে শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখের পলকেই। তার ওপর যুক্ত হয়েছে টিকিটের গলাকাটা দাম। সরকারি নির্দেশে করোনা পরিস্থিতিতে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে বাস চলাচল করার কারণে ভাড়া ৬০ শতাংশ বেশি নেওয়া হচ্ছে, এর পরেও কৌশলে টিকিটের আরও অতিরিক্ত দাম রাখতে দেখা গেছে গাবতলীর কাউন্টারগুলোতে।
ঢাকা থেকে যশোর যাবেন সরকারি চাকরিজীবী মাশায়েল অমি। শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাতের টিকিট সংগ্রহ করেছেন সোহাগ পরিবহনের। যশোরে যাওয়ার কথা থাকলেও তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে খুলনার টিকিট এবং দাম রাখা হয়েছে ঢাকা থেকে খুলনা ভ্রমণের। নির্দিষ্ট রুটের সমপরিমাণ ভাড়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে।
বিষয়টিকে ভাড়া বেশি রাখার কৌশল উল্লেখ করে বলেন, কাউকেই যশোরের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। যে মাগুরা যাবে তাকেও খুলনার টিকিট দেওয়া হচ্ছে, যে যশোর যাবে তাকেও খুলনা বা সাতক্ষীরার টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যে ভাড়া রাখা হচ্ছে সেটা আরোপিত ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়ার থেকেও অনেক বেশি।
একই রুটে নির্ধারিত ভাড়া থেকে প্রায় ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে সাতক্ষীরার টিকিট সংগ্রহ করেছেন শুভ নামের এক যুবক। তিনি বলেন, নানা কৌশলে ভাড়া বেশি রাখা হচ্ছে। আমাদেরকে বাড়ি যেতে হবে তাই অসহায়ের মতো এসব মেনে নিচ্ছি।
সাতক্ষীরাগামী আরেক যাত্রী গাজী কাইয়ুম বলেন, অন্যান্য সময় যশোরের ভাড়া চেয়ার কোচে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা। এই সময় ৬০ পার্সেন্ট ভাড়া বৃদ্ধি করলে ভাড়া আসে ৭২০ টাকা। কিন্তু ভাড়া বেশি নেওয়ার উদ্দেশ্যে সবাইকে যশোরের বা মাগুরার টিকিট না দিয়ে খুলনা ও সাতক্ষীরার টিকিট দিচ্ছে। এতে করে ভাড়া বেশি নিলেও আইনি ও কৌশলগতভাবে তারা সঠিক থাকছে। এ বিষয়ে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরাগামী বেশ কিছু বাসের কাউন্টারে কথা বলে শুধু খুলনা আর সাতক্ষীরার টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুধু খুলনা আর সাতক্ষীরার টিকিট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সোহাগ পরিবহনের টিকিট মাস্টার আরমান জানান, যশোর, মাগুরার টিকিট শেষ। তাই খুলনা আর সাতক্ষীরার টিকিট বিক্রি করছি। আমরা তো কাউকে জোর করছি না। সবাই স্বেচ্ছায় টিকিট কিনছে। এখানে আমাদের দোষ কোথায়?
টিকিটের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি এগিয়ে অখ্যাত পরিবহনগুলো। রয়েল এক্সপ্রেস, ঈগল, গোল্ডেন লাইনসহ প্রায় সব পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। আকাশ পরিবহনের কাউন্টারে দিনাজপুরে যাওয়ার টিকিট আছে কিনা জানতে চাইলে কাউন্টার মাস্টার জানান, দিনাজপুর হবে না। সৈয়দপুরে রাতের গাড়ির টিকিট হবে। ভাড়া ১৪০০ টাকা। ভাড়া বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা আর ঈদের জন্য ভাড়া বেশি। তবুও অনেক কম রাখা হচ্ছে।
দিনাজপুরগামী যাত্রী খোশবুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে নন এসি গাড়ির ভাড়া ৫৫০ টাকা। ৬০ পার্সেন্ট ভাড়া বাড়ানোয় সেটা হতে পারে বড় জোর ৯০০, কিন্তু ১৪শ টাকা হয় কিভাবে? ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সেক্রেটারি খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, ভাড়া বেশি নেওয়াটা অন্যায়। এটার বিষয়ে মালিকরা কিছুই জানে না। সব কাউন্টারের কারসাজি। ভাড়া বেশি নেওয়ার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।