আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের (IVI) সদস্য পেয়েছে বাংলাদেশ। আইভিআইয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যোগদান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) কোরিয়ার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা) আইভিআইয়ের সদর দফতরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ, কোরিয়ায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ এবং আইভিআইয়ের সদস্য দেশগুলির প্রতিনিধিবৃন্দ সরাসরি এবং অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম শুভেচ্ছামূলক ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আইভিআইয়ের মহাপরিচালক ড. জেরোম কিম (Dr. Jerome Kim) এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে আইভিআই সদর দফতরে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির অনলাইনে যুক্ত হয়ে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আইভিআই-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জর্জ বাইকারস্টাফ, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যুরোর মহাপরিচালক চাংগ উক জিন, সিউলস্থ সুইডেন দূতাবাসের চার্জ দ্য’আফেয়ার্স Gabriella Auhustsson এবং সিউলস্থ ফিনল্যান্ড দূতাবাসের সহকারী মিশন প্রধান Mika Ruotsalainenm অনলাইনে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং অভিনন্দন জানান। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রীপ্রিয়া রাঙ্গনাথান অনলাইনে ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় আইভিআই-এর মহাপরিচালক ড. জেরোম কিম বাংলাদেশের সঙ্গে আইভিআইয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরে একটি বিশদ ও তথ্যমূলক উপস্থাপনা প্রদান করেন। আইভিআই-এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান জর্জ বাইকারস্টাফ তার স্বাগত বক্তব্যে আইভিআই প্রতিষ্ঠা-চুক্তির প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্য প্রাপ্তিতে বাংলাদেশকে স্বাগত জানান। তিনি নিরাপদ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন আবিষ্কার, উন্নয়ন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে বিগত দুই দশক ধরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আইভিআইয়ের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আইভিআইতে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় সহায়ক হবে এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক বাংলাদেশ ও আইভিআইয়ের মধ্যকার সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড বিশেষতঃ কলেরা, শিগেলা, অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল জাতীয় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বৈশ্বিক বাজারের জন্য স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশেই ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আইভিআইয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমর্থন প্রদানের জন্য আইভিআইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া বাংলাদেশে ভ্যাকসিন গবেষণা ও উন্নয়ন, ভ্যাকসিন প্রযুক্তি হস্তান্তর, বাংলাদেশের গবেষক ও চিকিৎসকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদানের জন্য আইভিআইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আইভিআইয়ের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নতুন ভূমিকা আগামীতে বাংলাদেশ ও আইভিআইয়ের মধ্যেকার সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে। রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বলেন, আইভিআইয়ে বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আইভিআই-এ বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সংক্রামক ব্যাধি হতে মুক্তি লাভে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আইভিআইয়ের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রোগমুক্ত বিশ্ব নিশ্চিতকরণে পূর্ণ সমর্থন প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, এই সদস্যপদটি বাংলাদেশে উন্নততর গবেষণা, ক্লিনিকাল বিকাশ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন তৈরির পথ সুগম করবে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।