কান নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা বোকামি! কোনো পূর্বাভাসই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকে না। সব অনুমান সীমাবদ্ধ থেকে যায় কাগজে-কলমে। গতকাল যেমন বলা নেই-কওয়া নেই আকাশ ছেয়ে গেলো মেঘে। হালকা বৃষ্টিও হলো। আবহাওয়ার মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণ পাম নিয়েও আগাম কিছু বলা যায় না। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা বলা যায় প্রতিবারই বড়সড় চমক দেখান। এবারও ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
বিশ্ব চলচ্চিত্রের তীর্থভূমি কানে আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে সমাপনী আয়োজনে ঘোষণা করা হবে স্বর্ণ পাম জয়ী ছবির নাম। এর মধ্য দিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৪তম আসরের পর্দা নামছে। সাগরপাড়ের শহরটিতে এখন প্রশ্ন একটাই—কার ভাগ্যে আছে স্বর্ণ পাম? কোন ছবি জিতবে পৃথিবী গ্রহে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে আরাধ্য পুরস্কারটি।
২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বঙ জুন-হো পরিচালিত ‘প্যারাসাইট’ স্বর্ণ পাম জয়ের পর ইতিহাস গড়ে অস্কারও জেতে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে কান উৎসব বাতিল হয়। ফলে এবারের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের সভাপতি আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ পরিচালক স্পাইক লি’র জন্য কাজটা বেশ কঠিন! তার কাছ থেকে স্বর্ণ পাম পাওয়ার পর সেই ছবি কেমন সাড়া জাগায় সেদিকে তাকিয়ে থাকবে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।
বিচারক প্যানেলে বাকি আট বিচারকের পাঁচজনই নারী। এজন্য ফ্রান্সের ক্যাথেরিন করসিনির ‘দ্য ডিভাইড’, মিয়া হানসেন-লাভের ‘বার্গম্যান আইল্যান্ড’ ও জুলিয়া দুকুরনোর ‘টাইটেন কিংবা হাঙ্গেরির ইলদিকো এনিয়েদির ‘দ্য স্টোরি অব মাই ওয়াইফ’ স্বর্ণ পাম জিততে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কানের ইতিহাসে নারী নির্মাতাদের মধ্যে কেবল জেন ক্যাম্পিয়ন স্বর্ণ পাম জিতেছেন ১৯৯৩ সালে। দ্বিতীয়বারের মতো কোনো নারী নির্মাতার ছবি স্বর্ণ পাম জেতে কিনা তা দেখতে মুখিয়ে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান।
কার হাতে উঠবে স্বর্ণ পাম সেই প্রশ্নের দেওয়া কঠিন হলেও আলোচনা তো করা যেতেই পারে। উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে স্বর্ণ পাম নিয়ে আলোচনা হলো। নেদারল্যান্ডসের সাংবাদিক কোয়েন ফন জোল ভাবছেন, ইরানি পরিচালক আসগর ফারহাদির ‘অ্যা হিরো’ স্বর্ণ পাম জিতবে। আমেরিকান সাংবাদিক সোফিয়া আন্ড্রেড মনে করছেন, জাপানের রিয়ুসুকে হামাগুচির ‘ড্রাইভ মাই কার’-এর ভালো সম্ভাবনা আছে। দুটোর যেকোনোটা স্বর্ণ পাম জিতে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
গত ৬ জুলাই শুরু হওয়া এই মহাযজ্ঞের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকা ২৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বেশিরভাগই। এ তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস অ্যান্ডারসনের ‘দ্য ফ্রেঞ্চ ডিসপাচ’, শন বেকার পরিচালিত ‘রেড রকেট’ ও শন পেনের ‘ফ্ল্যাগ ডে’, চাদের মোহাম্মদ সালাহ হারুনের ‘লিঙ্গুই, দ্য স্যাক্রেড বন্ডস’, রাশিয়ার কিরিল সেরেব্রেনিকোভের “পেত্রোভ’স ফ্লু”, নরওয়ের ইওয়াকিম ট্রিয়ারের ‘দ্য ওর্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’, ইসরায়েলের নাদাভ লাপিডের “আহেদ’স নি”, ইতালির ন্যানি মোরেত্তির ‘থ্রি ফ্লোরস’ এবং নেদারল্যান্ডসের পল ভারহোভেনের ‘বেনেদেত্তা’।
অনেকের পছন্দের তালিকায় আছে ফ্রান্সের তিন ছবি জ্যাক অদিয়াঁরের ‘প্যারিস থার্টিন্থ ডিস্ট্রিক্ট’, ফ্রাসোয়া ওজোর ‘এভরিথিং ওয়েন্ট ফাইন’ ও লিও ক্যারাক্সের ‘আনেট’। এগুলো নিয়েও বাজি ধরার দর্শকের অভাব নেই! এগুলোর কোনোটি স্বর্ণ পাম জিতলে অপ্রত্যাশিত কিছু মনে হবে না।
শেষমেশ কার ভাগ্যে যাবে স্বর্ণ পাম তা আদতে বিচারকদের প্রধান স্পাইক লি এবং তার প্যানেলের বিচারকদের ওপর নির্ভর করছে। তারা হলেন সেনেগাল-ফরাসি পরিচালক মাতি দিওপ, কানাডিয়ান-ফরাসি সংগীতশিল্পী মিলেন ফারমা, আমেরিকান অভিনেত্রী ম্যাগি জিলেনহাল, অস্ট্রিয়ার পরিচালক জেসিকা হাউসনা, ফরাসি অভিনেত্রী মেলানি ল্যঁহো। এছাড়া আছেন ব্রাজিলিয়ান পরিচালক ক্লেবার মেনদোনচা ফিলো, ফরাসি অভিনেতা তাহের রহিম এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অভিনেতা সঙ কাঙ-হো।