ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নার্স হিসেবে কাজ করেন আইসাতু দিয়ালো সানে। কৃষ্ণাঙ্গ এই তরুণী রাতারাতি বনে গেছেন ফরাসি চলচ্চিত্রের নতুন মুখ। কান উৎসবের ৭৪তম আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে থাকা ক্যাথেরিন করসিনির ‘দ্য ডিভাইড’ তাকে নিয়ে এসেছে পাদপ্রদীপের আলোয়। ছবিটিতে প্যারিসের একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্যস্ত নার্স কিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইসাতু দিয়ালো সানে। সরকারবিরোধী ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাজানো গল্পে চিকিৎসার সীমাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায় এই নার্স।
গত ৯ জুলাই বিমান ধরে নিসে এসে ট্যাক্সিতে চড়ে কানসৈকতে হাজির হন আইসাতু দিয়ালো সানে। এরপরই কানের ফটোকল ও লালগালিচায় আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় ধরা পড়েন। অথচ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪৮ ঘণ্টা আগেও রোগীদের সেবা করেছেন তিনি। পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের তিন তলায় গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয় দ্য ডিভাইড ছবির কলাকুশলী। এখানে ৩৮ বছর বয়সী আইসাতু দিয়ালো সানে জানান, ২০ বছর ধরে নার্স হিসেবে কাজ করছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন সন্তানের মা। হাসপাতালে রোগীদের সেবায় অবিরাম পরিশ্রম করে ঘরে ফিরলেও মাঝে মধ্যে জরুরি বিভাগের ঘণ্টা কানে বাজে তার!
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাথেরিন করসিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন দ্বিগুণ করে দিতে বলতাম।’ ‘দ্য ডিভাইড’কে বলা যায় ফ্রান্সের সামাজিক উৎকণ্ঠার একটি খণ্ডচিত্র। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগেই ছবিটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে এর চিত্রায়ন হয়েছে লকডাউনের মাঝামাঝি। এতে আরও অভিনয় করেছেন ভ্যালেরিয়া ব্রুনি তেদেশি, পিও মারমাই, মারিনা ফয়েস।
গত ৯ জুলাই পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ‘দ্য ডিভাইড’ ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। গতকাল সকালে একই ভেন্যুতে ছিলো এর আরেকটি প্রদর্শনী। গতকাল উৎসবের পঞ্চম দিনে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে আরও দেখানো হয় পল ভারহোভেনের ‘বেনেদেত্তা’, ফিনল্যান্ডের ইওহো কুয়োসমানের ‘কম্পার্টমেন্ট নম্বর সিক্স’ এবং হলিউড তারকা শন পেন পরিচালিত ও অভিনীত ‘ফ্ল্যাগ ডে’। অফিসিয়াল সিলেকশনের এই বিভাগে ১০ জুলাই ছিলো রাশিয়ার নারী নির্মাতা কিরা কোভালেনকার ‘আনক্লেন্সিং দ্য ফিস্টস’, ফরাসি নারী নির্মাতা আফসিয়া আর্জির ‘গুড মাদার’, ইসরায়েলের এরান কোলিরিনের ‘লেট ইট বি মর্নিং’।
প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে
গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে দেখানো হয়েছে ফরাসি নারী নির্মাতা ইমানুয়েল ব্যারকোর ‘পিসফুল’। কান প্রিমিয়ার বিভাগে ছিলো ফ্রান্সের স্যামুয়েল বেনশেত্রিত পরিচালিত ‘লাভ সংস ফর টাফ গাইস’, সিনেমা ও জলবায়ু বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে ফরাসি নারী পরিচালক ফ্লো ভাসা পরিচালিত ‘বিগার দ্যান আস’। স্পেশাল প্রদর্শনীতে ছিলো অদ্রে এস্ত্রোগোর ‘সুপ্রিমস’।
সিনেমা ডি লা প্লাজ
সূর্যাস্তের পর কানের মাচি সৈকতে উন্মুক্ত আয়োজনে শনিবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ছিলো মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার রোমাঞ্চ নিয়ে সাজানো ‘দ্য সামিট অব দ্য গডস’। অ্যানিমেটেড ছবিটির ফরাসি পরিচালক প্যাট্রিক অম্বেয়ার প্রদর্শনীতে ছিলেন।
কান ক্ল্যাসিকস
ধ্রুপদি ছবির বিভাগে শনিবার কান দেখিয়েছে ক্রিস্তফ কিসলোস্কির ‘দ্য ডাবল লাইফ অব ভেরোনিক’ (১৯৯১), আফ্রিকান-আমেরিকান পরিচালক অস্কার মাইকোর ‘মার্ডার ইন হারলেম’ (১৯৩৫) এবং পিটার ওলেন পরিচালিত “ফ্রেন্ডশিপ’স ডেথ” (১৯৮৭)। শেষোক্ত ছবিটির অভিনেত্রী টিল্ডা সুইনটন প্রদর্শনীতে ছিলেন।
এছাড়া নতুন প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে দেখানো হয়েছে অস্কারজয়ী ব্রিটিশ প্রযোজক জেরেমি থমাসের ওপর মার্ক কাজিনসের ‘দ্য স্টর্মস অব জেরেমি থমাস’ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের সবচেয়ে সফল আফ্রিকান-আমেরিকান পরিচালক অস্কার মাইকোর জীবন অবলম্বনে ইতালির ফ্রান্সেসকো জিপেলের ‘অস্কার মাইকো-দ্য সুপারহিরো অব ব্ল্যাক ফিল্মমেকিং’।