দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৮ জুলাই সকাল ৮টা) নতুন ৩৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর তারা সবাই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ডা. মােহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৬ জনের মধ্যে ৫ জন সরকারি হাসপাতাল এবং বাকি ৩১ জন বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই জন ঢাকা শিশু হাসপাতাল এবং তিনজন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকাদের মধ্যে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল তিন জন, বারডেম হাসপাতাল ও ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে একজন করে দুই জন, ধানমন্ডি স্কয়ার হাসপাতালের দুই জন, ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে তিন জন, গ্রীন লাইফ মেডিকেল হাসপাতালে তিন জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে সাত জন, খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতাল চার জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জন, আদ-দ্বীন মেডিকেল ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জন করে দুই জন, আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জন এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৫১ জন রোগী। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি ৪১টি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৪৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দুই জন।
এতে আরো বলা হয়, চলতি বছর মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়া ৬০১ জনের মধ্যে কেবল জুলাই মাসের ৮ জুলাই পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২৩০ জন।
তবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে তথ্য নেই। কিন্তু বুধবারই (৭ জুলাই) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদা নাসরীন বাবলী।
এর আগে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীতে একদিনে নতুন করে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের খবর জানিয়েছিল। আজ নতুন করে আরও ৩৬ জনের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর জানানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণের এই অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. নাজমুল ইসলাম।
ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের প্রতি বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গুকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। বৃষ্টিতে পানি জমে থাকছে। এ কারণে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা কিছুটা বাড়ছে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কারও যদি জ্বর থাকে তাহলে কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। সারাদেশে সিভিল সার্জনদের কাছে পর্যাপ্ত এনএস-১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যায় নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানি, প্লাস্টিকের ড্রাম, বালতি, পানির ট্যাংক, বাড়ি করার জন্য নির্মিত গর্ত, টব, বোতল ও লিফটের গর্তে। আর এই প্রকোপে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শনাক্ত হয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে মাসে ৪৩ জন, আর জুন মাসে ২৭১ জন।