দেশে তিন নদী অববাহিকায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে বন্যা শুরু হয়ে অন্তত ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। এতে উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ২৩টি জেলা আক্রান্ত হবে। এফএফডব্লিউসি বন্যা সম্পর্কিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল বর্তমানে স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তা লাভ করতে পারে।
এতে চলতি সপ্তাহে অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি ৭ দিনে সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সোমবার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
এফএফডব্লিউসির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানির সমতল বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিধায় বিশেষ সময়ে পানি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। রাজশাহী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা গঙ্গা (পদ্মা) নদীতে এবার এখন পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা দেখছে না এফএফডব্লিউসি। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি নেমে এসে পদ্মায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে এসে গঙ্গা ও যমুনা মিলে একত্রে পদ্মা নামে প্রবাহিত হয়েছে।
এফএফডব্লিউসির তথ্য অনুযায়ী, আগামী এক সপ্তাহে মেঘনা অববাহিকার উপরের অংশ বা সুরমা-কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভূগাই-কংস, মনু ও খোয়াই নদী কোথাও কোথাও বিশেষ সময়ে বিপৎসীমা পার করতে পারে। এ কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা দেখা দিতে পারে। আর হালদা, মাতামুহুরী, সাঙ্গুসহ পার্বত্য অববাহিকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ভারি বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।
মূলত অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর উজান থেকে আসা পানির কারণে বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে। গত বছর ২৭ জুন থেকে প্রায় দেড় মাস স্থায়ী বন্যার কবলে পড়েছিল দেশ। সেই হিসাবে এবার এখন পর্যন্ত নিরাপদ আছে দেশ। গত বছর বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের কারণে অতিবৃষ্টি থেকে এই বন্যা তৈরি হয়েছিল। এবারও অবশ্য উভয় সাগর থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর থেকে বেশকিছু বৃষ্টিও হয়। তবে তা বন্যায় রূপ নেয়নি।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত দেশের চারটি অববাহিকায় বন্যা হয়ে থাকে। এগুলো হলো ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, মেঘনা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকা। এখন যে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, সেটা প্রথম তিনটিতে ঘটার আশঙ্কা আছে। সাধারণত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বন্যা জড়িত। বর্তমানে বিপৎসীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে নদীগুলো। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায়ই ১০ দিনে ১৫৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর কারণে ৬ জুলাই উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, বন্যা থেকে মানুষকে রক্ষায় বর্তমানে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে সরকারের ভালো প্রস্তুতি আছে। কিন্তু দরকার দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন। বন্যার পরপরই নদীভাঙন দেখা যায়। এতে অনেকে সর্বস্বান্ত হন। বন্যার সময়ে অনেকে এসে বাঁধের উপর উঠেন। বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় বা পুনর্বাসন না করায় তারা আর বাঁধ থেকে যান না। এতে বাঁধের ক্ষতি হয়। তাই সরকারকে পুনর্বাসনে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি করোনার মধ্যে বন্যার্তরা যাতে সংক্রমিত না হয়, এ ব্যাপারে মাঠপ্রশাসনকে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।