সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার স্কুল ফিডিং প্রকল্পের মেয়াদ শেষে আরো এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীন ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ৩৩৮ কিলোক্যালরি শক্তির বিস্কুট বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে সেই প্রস্তাব এখনো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে এ কার্যক্রম।
জানা গেছে, সরকারের সফল এ প্রকল্পটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় চলমান প্রকল্পটির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা একনেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়নি।
স্কুল ফিডিং প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ১০৪টি উপজেলায় ২০১০ সাল থেকে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট বিস্কুট বিতরণ করা হয়। এই বিস্কুট থেকে একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৩৩৮ কিলোক্যালরি শক্তি পায়। প্রকল্পটি প্রথম দফায় ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাস্তাবায়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প সংশোধন করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে জিওবি (সরকারি তহবিল) ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৫৪৫ কোটি নয় লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
বিস্কুট বিতরণের সফলতা থেকে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবার দিতে জাতীয় স্কুল মিল নীতিমাল-২০১৯ প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ প্রকল্পটি গত ১ জুন একনেকে উত্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার খিচুড়ি দেয়ার প্রস্তাব করায় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ প্রকল্পটির অনুমোদনে বিলম্বের কারণে ব্যয় না বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আরেক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে, সেজন্য চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। মহামারির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট বিতরণ করেন শিক্ষকরা। এবার প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়িয়ে আরো এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করলে তাতে সায় দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলমান স্কুল মিল প্রকল্পটি আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় আগামী মাস থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হবে না। ফলে শিশুদের স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এছাড়া স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য এবং ব্যয় প্রাক্কলনের যথার্থতা যাচাই করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এ পরিস্থিতিতে চলমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষে খরচ না হওয়া ৪৭৩ কোটি নয় লাখ টাকা দিয়ে আগামী এক বছর শিক্ষার্থীদের উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট বিতরণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. রুহুল আমিন বলেন, চলমান প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই নতুন প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ডিপিপি সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। কেন হয়নি সে বিষয়ে এ মন্ত্রণালয়ের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।