বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি লোকসানে পণ্য বিক্রি করছে। যে কারণে দেশের ই-কমার্স ব্যবসায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ভালো ও সৎ ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ভবিষ্যতে এই খাতের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
অগ্রিম পণ্যমূল্য নিয়ে ও উচ্চ হারে ছাড় দিয়ে ই-ভ্যালির গ্রাহকদের অর্থকে ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের কাছে মনে হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের কাছে এবং পণ্য উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীদের কাছে বকেয়া বাড়ছে কোম্পানিটির। কোম্পানিটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্ট চক্রে বাধা পড়েছে। ক্রমাগতভাবে এমন দায় তৈরি হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
বলা হয়েছে, কোম্পানিটির লোকসান দিন দিন বাড়ছে। প্রথম বছর কোম্পানিটির নিট লোকসান হয় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত ১৪ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৬ কোটি টাকা। আগের দায় পরিশোধ ও লোকসান আড়াল করার জন্য কোম্পানিটি সাইক্লোন, আর্থকোয়েক নামের বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার দিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রয়াদেশের ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহককে তার পরিশোধিত মূল্যের পরিবর্তে পণ্যটির বাজারমূল্য ফেরত দিচ্ছে। তাই বিপুলসংখ্যক গ্রাহক অনেক বেশি অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় ই-ভ্যালির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে দায়দেনা কাটিয়ে ওঠার কোনো গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা বা সম্ভাবনা দেখতে পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ই–ভ্যালির গ্রাহক ছিল ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার জন। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০৩ কোটি টাকা, আর চলতি সম্পদ ছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকার। এই সম্পদ দিয়ে কোনো অবস্থাতেই কোম্পানিটি দায় পরিশোধ করতে পারবে না। এ ছাড়া পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৪ কোটি টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ করেনি ই–ভ্যালি। আবার যেসব কোম্পানির কাছ থেকে ই-ভ্যালির পণ্য কিনেছে, তাদের কাছেও এর বকেয়া পড়েছে ১৯০ কোটি টাকা। চলতি সম্পদ দিয়ে বকেয়া অর্থের মাত্র ১৬ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ই-ভ্যালির আর্থিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিতে বললেও বারবার সময় চায় ই-ভ্যালি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকেরা দেখতে পেয়েছেন, অতীতের একটি নির্দিষ্ট তারিখের তথ্য নেই কোম্পানিতে। এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘এটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরিদর্শন। বাস্তবে লোকসানকে এই সময়ে আমরা বিনিয়োগ হিসেবে মেনে নিচ্ছি এবং মুনাফার দিকে যাচ্ছি।’ মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘গোটা বিশ্বে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে চলছে, আমরাও সেভাবেই চলছি। কোম্পানিটি এই সময়ে বিলুপ্ত করার প্রশ্ন উঠলে সম্পদ-দায়ের পার্থক্যের প্রসঙ্গটি যৌক্তিক হতো। দায়দেনা কাটিয়ে ওঠার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই কথাটি ঠিক নয়। পরিদর্শক দল আমাদের সব কথা শুনতেও চায়নি।’
অর্থ ফেরতের দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পর্কে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘বাস্তব কারণও আছে। অনেকে বোনাস নেয়। অনেকে আংশিক ব্যয় করে ফেলে। আর তথ্য প্রদানের সময় দেওয়া হয়েছে অল্প। তারপরও যত বেশি তথ্য দেওয়া সম্ভব, দেওয়া হয়েছে। স্বীকার করছি, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক তথ্য এখনো গোছানো হয়নি।’