ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী একেবারে নতুন ধরনের একটি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন। পাট থেকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকের গঠন ও বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে, এটি শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে জীবাণুপ্রতিরোধী অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিয়ে যখন ক্রমশই উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ছে তখন এই আবিষ্কার আশার সঞ্চার করছে। নতুন এই অ্যান্টিবায়োটিকের নাম দেওয়া হয়েছে হোমিকরসিন। প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়া ও পাটের বৈজ্ঞানিক নাম মিলিয়ে এই অ্যান্টিবায়োটিকটির নামকরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচারের সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ল্যাবে তিন বছর ধরে গবেষণার পর এই অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষক ড. হাসিনা খানের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পাট নিয়ে গবেষণা করছেন।
ড. হাসিনা খান জানান, পাটের জীবন রহস্য উদঘাটনের সময় তিনি এর ভেতরে বিভিন্ন ধরনের অণুজীবের সন্ধান পেয়েছিলেন। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই তিনি বিভিন্ন অণুজীবের ওপর গবেষণা শুরু করেছিলেন। তার এক পর্যায়ে অনেকটা আকস্মিকভাবেই তিনি এই অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পান। এটা অনেকটা অপ্রত্যাশিতই বলবো। পাট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি পাটের অণুজীবের সন্ধান পেলাম। তখন সেগুলোকে খুব ইন্টারেস্টিং বলে মনে হলো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাটের তন্তুর খাঁজে খাঁজে বহু অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া বাস করে। এদের মধ্যে তারা একটি ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পান যা তার নিজের শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে, যাতে অন্য ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায়। বিজ্ঞানীরা যে অণুজীবের ভেতরে অভিনব এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান সেটি তারা পেয়েছেন পাটের বীজের ভেতরে। তারা দেখেন স্টেফাইলোকক্বাস হোমিনিস নামের এই ব্যাকটেরিয়াটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, যাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে অণুজীবের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তাদের চিকিৎসায় এই হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক ভালোভাবেই কাজ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, তারা যে হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছেন সেটি বেশ কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীরা তাদের আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিকের পাঁচটি ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পেয়েছেন। এরমধ্যে দুটো ভ্যারিয়েন্টের কথা সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি তিনটি ভ্যারিয়েন্টের কার্যকারিতা নিয়ে এখনও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই পাঁচ রকমের ভ্যারিয়েন্ট থেকে অন্তত পাঁচটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা যেতে পারে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে তৈরি করতে পারে নতুন এক ইতিহাস। তবে এই হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক এখনই চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে না। এনিয়ে আরো গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন।