প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হয়ে থাকে বছরের নভেম্বর মাসে। এই চার পরীক্ষায় কমবেশি ৫০ লাখ পরীক্ষার্থী থাকে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাগুলো হয় ডিসেম্বর মাসে। আর প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর থেকে শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী কোনো কিছুই হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সরকার একাধিকবার পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার। কিন্তু খোলা সম্ভব হয়নি।
সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি আছে। কিন্তু এর মধ্যেই সরকার মানুষের চলাচল ও সার্বিক কার্যক্রমের ওপর চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ফলে তার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। আবার ঈদুল আজহার সম্ভাব্য ছুটি আছে ২০ থেকে ২২ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সময়ের হেরফের হতে পারে)। তাই ঈদুল আজহার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। আবার এখন করোনা পরিস্থিতিও দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, সেটিও শিক্ষা প্রশাসনের কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল বলেন, পরিস্থিতি দেখে ৩০ জুনের আগে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর এখন পর্যন্ত জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনাই আছে। কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তাঁরা পরিকল্পনাগুলো করছেন। সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁরা পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
করোনা পরিস্থিতিতে চলমান বন্ধের কারণে আগের বছরের মতো এ বছরের প্রায় ছয় মাস ধরে শ্রেণিকক্ষে কোনো ক্লাস হয়নি। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পাঠ্যসূচিও এগোয়নি। এমনকি এসব শিক্ষার্থী করোনার কারণে গতবারও ক্লাস না হওয়ায় পরীক্ষা ছাড়াই ওপরের শ্রেণিতে উঠেছে। এ অবস্থায় ছুটি আরও দীর্ঘ হলে এবারও পরীক্ষা ছাড়াই ওপরের শ্রেণিতে ওঠানো হবে কি না, সেটা আলোচনায় এসেছে। অন্যদিকে আটকে থাকা চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা নিয়ে বিকল্পভাবে মূল্যায়নের প্রাথমিক চিন্তাভাবনা করা হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি শিক্ষা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত পরীক্ষার পক্ষেই আছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে তারা।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষার বিষয়ে করণীয় কী হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার খুব একটা গুরুত্ব দেখি না। বরং এই পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার কিছুটা গুরুত্ব থাকতে পারে। কিন্তু না হলেও কোনো ক্ষতি হবে না। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই শ্রেণির পরীক্ষা না হওয়া উচিত। তবে এসএসসি এবং এইচএসসির মূল্যায়ন কোনোভাবেই পরীক্ষা ছাড়া হওয়া উচিত নয়। এ জন্য প্রয়োজনে আরও অপেক্ষা করা উচিত।’