উত্তপ্ত ও সহিংস হয়ে উঠেছে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। অন্তত অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে বরিশাল, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, নরসিংদী ও মাদারীপুর জেলার ইউপিগুলোতে বেশি সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে শনিবার হামলা, পাল্টা হামলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ এলাকায় স্থানীয় এমপি সমর্থক ও বিরোধী প্রার্থী-কর্মীদের মধ্যে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ নিয়ে কমিশনে এ পর্যন্ত ৩০-৪০টি অভিযোগ এলেও সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত করেনি ইসি। ইসির বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এমন পরিস্থিতির মধ্যে কাল সোমবার ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। যদিও ভোটের আগেই ২৮টিতে সরকারদলীয় চেয়ারম্যানরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তবে মেম্বার পদে ভোট হবে। একইদিন লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসন ও দুটি পৌরসভাতেও ভোটগ্রহণ হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও ভরা বর্ষার মধ্যে এসব নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করতে যাচ্ছে ইসি। শনিবার নির্বাচনী এলাকায় আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। যদিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ৭টি পৌরসভা ও ১৬৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকটি ইউপিতে প্রার্থীদের আচরণবিধি লংঘন ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। অনেক প্রার্থী কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করেছেন। এসব তথ্য জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত ৩০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। ওইসব আবেদন আমলে নেয়নি কমিশন। ভোটগ্রহণের দিন সহিংসতার শঙ্কায় মাদারীপুর, নরসিংদী, গাজীপুরসহ কয়েকটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার এসব সদস্য মাঠেও নেমেছেন। তবে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা আচরণবিধি লংঘনের দায়ে অনেককেই সতর্ক করেছেন, জরিমানাও করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম যুগান্তরকে বলেন, ভোট ঘিরে উত্তেজনা ও শঙ্কা আছে, থাকবে। তবে তা সীমা লঙ্ঘন যাতে না ঘটে সেজন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ৩৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ৯টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১ এপ্রিল ওইসব নির্বাচন স্থগিত করা হয়। কিন্তু পরে আবারও সেগুলোতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ৩৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১৬৩টি ও ৭টি পৌরসভার সাতটিতে আবারও ভোট স্থগিত করা হয়। বাকি ২০৪টি ইউপি ও ২টি পৌরসভায় কাল ভোটগ্রহণ হবে। একইদিন লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। লক্ষ্মীপুর-২ সংসদীয় আসন, দুটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। বাকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোট হবে।
মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে সহিংসতার আশঙ্কা বেশি। এ বিভাগের ৬ জেলার ৩০টি উপজেলার ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। যদিও ২৬টিতে চেয়ারম্যানরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বরিশাল জেলার ৯টি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে হিজলা, মুলাদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল সদর ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এসব এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে।
আরও জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া, চরবাড়িয়া ও কাশিপুর, উজিরপুর উপজেলার জল্লা ও সাতলা, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি, দাড়িয়াল, কবাই ও গাড়োরিয়া, হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর, মেমানিয়া, বড়জালিয়া, মুলাদী উপজেলার সফিপুর, বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ও বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই ধরনের আশঙ্কা রয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা, দুমকীর মুরাদিয়া, বাউফলের কাচিপাড়া, কেশবপুর, আদাবাড়িয়া ও চন্দ্রদ্বীপ ইউপিতে।
এছাড়া রয়েছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী আমড়াগাছিয়া, বেতমোড় ও শাপলেজা। বরগুনার সদর উপজেলার বদরখালী, বুড়িরচর, আয়ালা পাতাকাটা, নলটোনা ও বদরখালী, বেতাগী উপজেলার বেতাগী ও কাজীরহাট, আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া এবং বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ও ডৌয়াতলা। ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ও চাচড়া। ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার গাবখানধানসিড়ি, গাভারামচন্দ্রপুর ও কীত্তিপাশা, নলছিঠি উপজেলার মোল্লারহাট ও দপদপিয়া, কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ও আওরাবুনিয়া এবং রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চররমিজ ও কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউপিতে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।