করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীন সরকারের উপহার দেয়া সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকার প্রদান কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। শনিবার (১৯ জুন) থেকে সারাদেশে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ টিকা দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডাইরেক্টর (এমএমসি অ্যান্ড এ এইচ) ও সদস্য সচিব করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটি ডাক্তার মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
যারা ভ্যাকসিন পাবেন
চিঠিতে বলা হয়, করোনা ভ্যাকসিনেশনের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যে সকল ব্যক্তি রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন পাননি তাদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আগে যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি এমন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। বিদেশগামী বাংলাদেশি অধিবাসী কর্মী, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সরকারি ম্যাটস ও সহকারী আইএসটি শিক্ষার্থীরা এ টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরাও এ টিকা পাবেন।
বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্প কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী (যেমন পদ্মা সেতু প্রকল্প মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প মেট্রোরেল প্রকল্প এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রংপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সারাদেশে করোনা রোগীর মৃতদেহ সৎকার কাজে নিয়োজিত ওয়ার্ড পৌরসভার কর্মী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিক।
ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি জেলায় (ঢাকা জেলা বাদে) একটি করে ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দু’টি করে বুথ থাকবে। ঢাকা জেলায় চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) প্রতিটিতে একটি করে ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দু’টি করে বুথ থাকবে।
যে সকল জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেই সে সকল জেলায় সিভিল সার্জন জেলা করোনা ভ্যাকসিন কমিটির সাথে আলোচনা করে সদর হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এর যেকোনো একটিকে নির্বাচিত করে ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে এবং ওই কেন্দ্রে দু’টি করে বুথ থাকবে। ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র প্রতিদিন (শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে।
ভ্যাকসিন গ্রহীতার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে (যেমন ১৫০-২০০ জনের জন্য একটি বুথ, ২০০ জনের বেশি হলে দু’টি বুথ)। প্রতিটি বুথে দু’জন ভ্যাক্সিনেটর ও তিনজন ভলান্টিয়ার থাকবেন। প্রথম ডোজ প্রধানের ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করতে হবে। সংযুক্ত ফরমেট অনুযায়ী ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের তালিকাভুক্ত করে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। প্রতিটি ভ্যাক্সিনেশন কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল টিম থাকতে হবে যাদের এইএফআই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকবে।
কেন্দ্রের ফোকাল পার্সন সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচার-প্রচারণা করবেন। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে যে সকল জনগণ পূর্বে নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ভ্যাকসিন পাননি তাদেরকে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে। কেন্দ্র পরিবর্তন করে ভ্যাকসিন প্রদান করা যাবে না। যারা পূর্বে অন্য কোনো করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদেরকে টিকা প্রদান করা যাবে না। অনিবন্ধিত ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করতে পারবেন না। অন্য কোনো দেশ থেকে প্রথম ডোজ গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসলে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না। ভ্যাকসিন প্রদানের পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল অ্যাপে ভ্যাকসিন প্রদানের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে হালনাগাদ করতে হবে।
যাদেরকে ভ্যাকসিন প্রদান করা যাবে না
অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জ্বরাক্রান্ত বা অসুস্থ ব্যক্তি। প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক বা শ্বাসকষ্ট, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যান্সার আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।