সোমবার (১৮ আগস্ট) উপজেলার পুনট বাজারে অবস্থিত মঞ্জুর আইডিয়াল স্কুল নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল চত্বরে এ ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন। তবে স্কুলের পরিচালক মঞ্জুর রাহী চৌধুরী বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, শুধু পরীক্ষার ফি নয়, বকেয়া মাসিক বেতন না দেওয়ায় তাকে পরীক্ষা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থী সুরাইয়া মনি (৮) উপজেলার জালাইগাড়ী গ্রামে সাইফুল ইসলামের মেয়ে।
ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষার ফি না দেওয়ায় সুরাইয়াকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। তখন সুরাইয়া স্কুলের মাঠে কান্না করছিল। তারপরও তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি।
আরেক শিক্ষার্থী নাহিদা আক্তার বলেন, প্রতিমাসে স্কুলের বেতন ৩০০ টাকা, কোচিং বাবদ ৩০০ টাকা আর পরীক্ষার ফি ১৮০ টাকা দিতে হয়। সুরাইয়া পরীক্ষা ফি না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষিকা তাকে পরীক্ষার রুম থেকে বের করে দিয়েছেন। এ জন্য আমার খুব কষ্ট হয়েছে। আমি ম্যাডামকে বলেছি আগামীকাল সুরাইয়া টাকা না দিলে আমি বাবার কাছ থেকে টাকা এনে আপনাকে দেব, তবুও তিনি রাজি হননি।
শিক্ষার্থী সুরাইয়া মনি বলেন, টাকার জন্য আমাকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি। ম্যাডাম বলে, তোর বাবা টাকা দিতে পারে না, তাই তোকে পরীক্ষা দিতে হবে না। তুই বাড়ি যা বলে বের করে দেয়।
সুরাইয়ার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে স্কুলের বেতন দেই। অনেক সময় দেরি হয়, কিন্তু কোনো মাসের বেতন বকেয়া নেই। শুধু পরীক্ষার ফি বাকি ছিল। মঙ্গলবার দিতে চাইছিলাম। তার আগে আমার মেয়েকে প্রধান শিক্ষিকা পরীক্ষা দিতেই দেয়নি। বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছি। দেখা যাক, তিনি কি ব্যবস্থা নেন।
মঞ্জুর আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এমিলি ইয়াসমিন রিনা বলেন, যা করেছি তা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নিয়মেই করেছি। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ওই স্কুলের পরিচালক মঞ্জুর রাহী চৌধুরী জানান, তার যে শুধু পরীক্ষার ফি বকেয়া আছে তা নয়, গত তিন মাসের মাসিক বেতন বাবদ ৯৫০ টাকা বকেয়া আছে। এসব মিলেই প্রধান শিক্ষিকা ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বিরত রেখেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। অভিযোগ পেয়ে আজ মঙ্গলবার ওই স্কুলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব যাতে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানো হয়।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, অভিযোগ পেয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি ঘটনা তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে।