চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বলতা, প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে চিরন্তন সংযোগ সোনা শুধু একটি ধাতু নয়, এটি এক অনুভূতির নাম। প্রাচীন সভ্যতা থেকে আজকের মহাকাশযান পর্যন্ত, সর্বত্রই রয়েছে এর রাজত্ব। আজকের বিশ্বে স্বর্ণ শুধু ঐতিহ্য নয়, বরং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানেও এক গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য উপাদান। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সভ্যতা থেকে শুরু করে মহাদেশ ও মহাবীিশ্বে যেখানে প্রাণ, প্রযুক্তি আর প্রজ্ঞা মিলেছে, সেখানে সোনা মানে রাজত্ব। খবর: জিওলজি ডট কম।
সোনার প্রতি মানুষের চিরন্তন মোহ
প্রাচীন মিসর, ভারত, গ্রিক, রোমান, ইনকা বা অ্যাজটেক—প্রতিটি সভ্যতাই সোনাকে শক্তি, সৌন্দর্য, বিশুদ্ধতা ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে। ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি সমাজেই সোনার প্রতি মানুষের এক অনন্য আকর্ষণ দেখা গেছে।
অলংকারে সর্বাধিক ব্যবহার
বিশ্বজুড়ে উত্তোলিত সোনার প্রায় ৫০ শতাংশ যায় অলংকার শিল্পে। পুরাতন গহনা রিসাইকেল করেও নতুন গহনা তৈরি হয়। সোনার মরিচা না পড়া, সহজে গলানো ও পাতলা করার মতো গুণ এটিকে অলংকার তৈরির আদর্শ উপাদান করেছে।
ক্যারেট ও রঙের বৈচিত্র্য
বিশুদ্ধ সোনা নরম হওয়ায় তাতে তামা, রূপা বা প্যালাডিয়াম মিশিয়ে তৈরি করা হয় ২২, ১৮, ১৪ ক্যারেটের সোনা। এতে রঙেও আসে বৈচিত্র্য:
হলুদ সোনা: সোনা + রূপা + তামা
গোলাপি সোনা: বেশি তামা
সাদা সোনা: সোনা + প্যালাডিয়াম
সবুজ বা কালো সোনা: বিশেষ মিশ্রণে
প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সোনার অপরিহার্যতা
কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ঘড়ি—সবকিছুর সার্কিটে থাকে সোনা। প্রতি বছর উৎপাদিত শত কোটির বেশি মোবাইল ফোনে গড়ে ৫০ সেন্ট মূল্যের সোনা ব্যবহৃত হয়। তবে পুনর্ব্যবহার না হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বিশাল পরিমাণ মূল্যবান ধাতু।
কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, প্রসেসর সংযোগে সোনার নির্ভরযোগ্য পরিবাহিতা আজও অপরিহার্য।
চিকিৎসাক্ষেত্রে সূক্ষ্ম ব্যবহার
দাঁতের চিকিৎসায় সোনা ব্যবহৃত হয় ব্রিজ, ফিলিং ও ক্রাউনে, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে সোডিয়াম অরোথিওম্যালেট ইনজেকশন,ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিওঅ্যাকটিভ সোনা কণা।
চোখ বন্ধ না হওয়ার রোগে চোখের পাতায় সোনা বসানো, এছাড়া অস্ত্রোপচারের যন্ত্র, পেসমেকার ও লাইফ সাপোর্ট যন্ত্রে সোনা ব্যবহৃত হয় নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে।
মহাকাশে সোনার অবদান
নাসার প্রতিটি মহাকাশযানে শত শত স্থানে সোনা ব্যবহার করা হয়:
বৈদ্যুতিক সংযোগ
লুব্রিকেন্ট হিসেবে
সূর্যরশ্মি প্রতিফলনে সোনা প্রলিপ্ত ফিল্ম
স্পেসস্যুটের হেলমেটে সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষায় সোনার পাত
মহাকাশে যেখানে রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়, সেখানে একমাত্র ভরসা—সোনা।
অর্থনীতিতেও সোনার গুরুত্ব
একসময় ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’-এর মাধ্যমে কাগুজে টাকার পেছনে সোনার মজুদ থাকত। যদিও তা এখন আর প্রচলিত নেই, তবে বৈদেশিক রিজার্ভ, গোল্ড বুলিয়ন ও স্মারক মুদ্রায় সোনার ব্যবহার বহাল আছে।
রিসাইকেলযোগ্যতায় শীর্ষে
সোনা সবচেয়ে বেশি রিসাইকেলযোগ্য ধাতু। কারখানার প্রতিটি ধুলাও সংরক্ষিত হয়। কারণ এর মূল্য ও দুর্লভতা—উভয়ই চূড়ান্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, মহাকাশ, এবং ন্যানো-ইনোভেশনের এই যুগে সোনা শুধু অতীতের ঐতিহ্য নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই শুধু গহনায় নয়, আধুনিক সভ্যতার প্রতিটি স্তরেই রাজত্ব করছে সোনা।