বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৭ লাখ ৬ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানি কমেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল থেকে আকাশপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এরপর ১৭ মে আরও একটি নিষেধাজ্ঞায় গার্মেন্টস পণ্য, তৈরি পোশাক, তুলা ও সুতির বর্জ্য, প্লাস্টিক কাঠের আসবাবপত্র ও ফল জাতীয় পণ্যের রপ্তানিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বারবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অচলাবস্থা নিরসনে তারা দুই দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এছাড়া ২৬ জুন ভারত সরকার পাট ও পাটজাত পণ্য স্থলপথে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। অপরদিকে, বাংলাদেশ সরকার দেশীয় শিল্প সুরক্ষার অজুহাতে টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবির প্রেক্ষিতে ভারত থেকে সুতা আমদানি স্থলপথে নিষিদ্ধ করে।
বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন পণ্য। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ, আমদানিতে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন পণ্য। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টনে। এতে রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন।
আমদানিকারক ব্যবসায়ী আল মামুন জানান, বারবার নিষেধাজ্ঞার ফলে বাণিজ্য ধস নেমেছে এবং এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের কার্যকর ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে উভয় দেশের অর্থনীতিই ক্ষতির মুখে পড়ছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও অনেক অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে ৪৮৬ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে ৭৬ ট্রাক পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।