এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবে না- এই প্রস্তাবে বিএনপি, এনডিএম, এলডিপি এই তিনটি দল ছাড়া বাকিরা সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, দল তিনটি নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছে। আলোচনা শেষে তারা তা উপস্থাপন করবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরের বিষয়ে আলোচনা কাছাকাছি এসেছে। এছাড়া রাষ্ট্রের মূলনীতির প্রশ্নে অধিকাংশ দল পুনর্বহাল চায় পঞ্চম সংশোধনীর।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের পঞ্চম দিনের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদকাল ও সংবিধানের মূলনীতির প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত হলেও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
তিনি আরও জানান, আগামী দুই দিন বৈঠক মুলতবি থাকবে। এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয় ফোরামে অনৈক্যের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসার আহবান জানানো হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপের বিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একজন স্বৈরাচার হয়েছিল, সেটি মাথায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। আমরা লিখিত যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সে পক্ষেই আছি। অনেকে দুইবার থাকা নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পর সংসদ ভেঙে গেলে এর সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা আছে। অনেকে ১০ বছরের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এর বেশি নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এই মত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, আমাদের পাঁচ বছরের টার্ম। সে হিসাবে দুই বার কেউ যদি পরিপূর্ণ টার্ম পূর্ণ করেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। দুনিয়ার বহু দেশে এমন নজির আছে। বাংলাদেশের জন্য এটা আমরা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি এবং এটির ব্যাপারে প্রায় আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে যে সংশোধন এনে মূলনীতি গঠন করা হয়েছিল, সেসবের সঙ্গে বর্তমান কমিশনের প্রস্তাব যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। ঐক্যের বিষয়ে আমরা প্রায় কাছাকাছি আছি। কিছু দ্বিমত আছে।
পঞ্চম সংশোধনীর সঙ্গে বর্তমান কমিশনের প্রস্তাব মূলনীতিতে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একজন ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন-এমন একটি প্রস্তাবে তিনটি বাদে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে দাবি করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি জানান, রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতির বিষয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতা অব্যাহত রাখা উচিত। সংবিধানকে কীভাবে জবাবদিহিমূলক করা যায়, ক্ষমতাকে কীভাবে ভারসাম্যমূলক করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ঐকমত্যের স্বার্থে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের অবস্থান থেকে সরে আসছি। কিন্তু দু-তিনটি দল রিজিড পজিশনে আছে। এভাবে চলতে থাকলে কিয়ামত পর্যন্তও শতভাগ ঐকমত্য হবে না। এখানে ঐকমত্যের একটা মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে।
‘ভগ্নাংশ হোক আর পরিপূর্ণ হোক- দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এ প্রস্তাবনা আগে থেকেই ছিল’ উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, এখন এনসিসি, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন হবে কি না এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সবার মতের ওপর ছেড়ে দিলেও রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ৭২ এর সংবিধানের পুনরাবৃত্তি চায় না এনসিপি।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া বৈঠকে যোগ দেয় বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা কমিয়ে আনতে উচ্চকক্ষে ক্ষমতার বিন্যাসের পক্ষে অনেক রাজনৈতিক দল।