ইসি সূত্র জানায়, জুন মাসে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল নির্বাচন কমিশনের। তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া দ্রুত কাজ করতে গিয়ে ভোটারের তথ্য আপলোডের ক্ষেত্রে কিছু টাইপিং মিসটেকও হয়েছে। যা সংশোধনের জন্য আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ শেষ হলেই জুলাই মাসে খসড়া ভোটার তালিকাসহ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভোটের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কবে নাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা ভোটার হালনাগাদ করলেও চলতি বছরের মার্চ মাসে কিন্তু একটা তালিকা প্রকাশ করেছি। আমরা চাচ্ছি যে, তরুণ ভোটাররা যারা ভোট দিতে অনেক দিন ধরে বসে আছে, তারা কীভাবে ভোট দিতে পারবে সেটা নিশ্চিত করেই আমরা ভোটার তালিকা প্রকাশ করব। এসময় যদি আইনের সামান্য সংশোধন করতে হয় তাহলে তা করে যতদূর সম্ভব তরুণ ভোটারদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করব।’
ভোটার তালিকা প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সম্প্রতি যে ভোটার হালনাগাদ হয়েছে সেখানে ৬০ লাখের বেশি ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ তথ্য লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে কিছু টাইপিং মিস্টেক হয়েছে, সেটি সংশোধনের কাজ চলমান। যা চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপর যদি কমিশন মনে করে তাহলে জুলাইয়ে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
কমিশন সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ৩ ধারার উপধারা (জ) এবং ১১ ধারার ১ উপধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীতে এমন ভাষা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ এবং তালিকা সংশোধনের সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর মূল বিষয়গুলো
ধারা ৩(জ): ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ হিসেবে ১ জানুয়ারির পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অন্য তারিখ নির্ধারণের সুযোগ থাকছে।
ধারা ১১(১): ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ সময়সীমা ছাড়াও কমিশনের বিবেচনায় ‘উপযুক্ত সময়’ উল্লেখ করে নমনীয়তা আনার প্রস্তাব রয়েছে।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০, ২০১২-২০১৩, ২০১৫-২০১৬, ২০১৭-২০১৮, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সাল পর্যন্ত। আগের দুইবার তিন বছরের আগাম তথ্য নেওয়া হয়েছিল। এবার কেবল এক বছরে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকারের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত মোট ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৮ জন, নারী ভোটার রয়েছে ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৬ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছে ২১২ জন। তাদের মধ্যে ছবি তুলে ও আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৬১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৭ জন। এছাড়া মারা যাওয়ায় ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৩ জনকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। যার মধ্যে পুরুষ মৃত ভোটার বাদ যাবে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫২ জন, নারী মৃত ভোটার বাদ যাবে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৫৭২ জন এবং হিজড়া মৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে ৩২৫ জন।
সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন।