এবার বেড়েছে ডিম, মুরগি ও মাছের দাম। আর আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস ও সব ধরনের সবজি। অপরিবর্তিত আছে ডাল ও চালের দাম। শুক্রবার রাজধানীর মুগদা, বাসাবো এলাকার বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
মুগদার সবজি বিক্রেতা সালাম জানান, সবজির দাম কোনো সময় এক রকম থাকে না। আড়তে মাল বেশি উঠলে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে, আর যদি সরবারহ কম থাকে তাহলে দাম বেড়ে যায়। গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে কিছু সবজি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে আর কয়েকটির দাম বেড়েছে। সালাম বলেন, গত সপ্তাহে বেগুন, করলা ও পটোল বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আজকে একই দামে বিক্রি করছি। টমেটো ছিল ৪০ টাকা, আজ ৫০ টাকায় বিক্রি করছি।
এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি ঝিঙে ও চিচিঙ্গা, ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কচুর লতি ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ও পেঁপে ৪০ টাকায়, আলু ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও চালকুমড়া আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। লেবুর হালি আকার ভেদে ১৫-২৪ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকা, ধনিয়া পাতা ও পুদিনা পাতা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক, লাউশাক, কলমিশাক, ডাটাশাক, লালশাক ও পাটশাক আঁটিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।
বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। মুরগি ব্যবসায়ী সুমন জানান, গত শুক্রবারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি ১২০ টাকা কেজি দরে। পরে সোমবার পর্যন্ত ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় ছিল। এরপর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। আজকে ব্রয়লার বিক্রি করছি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সোনালিকা (কক) ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, লেয়ার (লাল) ২২০ টাকা।
শুক্রবার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় আর খাশির মাংসের কেজি ৮৫০ টাকা। প্রতিহালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। রাজধানীর মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, তেলের দাম আগেই বেড়েছে। ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৩৫ টাকা আর পাঁচ লিটার বোতল বিক্রি করছি ৬৯০ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট বিক্রি করছি ৫৮ টাকা, কাজল লতা ৫২ টাকা,পাইজাম ৫০ টাকা, নাজির ৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা ছিল, তার আগে ৬০ টাকা উঠেছিল। এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা-রসুন আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, আর দেশি রসুন ৭০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১০০ টাকা।
সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজারে বেড়েছে মাছের দাম। মাছ ব্যবসায়ী আক্তার জানান, ঘাটে মাছের দাম চড়া। গত সপ্তাহে টেংরা বিক্রি করেছি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আজকে বিক্রি করছি ৬০০ টাকা। বাইলা মাছও ৬০০ টাকা। বেশিরভাগ মাছের দামই বাড়তি।
এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি রুই, কাতলা ৩০০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৭০, আইড় ৪০০-৫০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০-৩৫০, বাইন মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, পুঁটি ৩৫০-৪০০ টাকা, পোয়া ৩০০-৪০০ টাকা, মলা ৩০০-৩৫০ টাকা, পাবদা ২৫০-৩৫০ টাকা, বোয়াল ৪০০-৫০০ টাকা, শিং ও দেশি মাগুর আকার ভেদে ৩০০-৬০০, শোল মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, টাকি মাছ ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০-১৬০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বড় ইলিশের কেজি ১২শ থেকে ১৪শ টাকা।
মুগদা বাজারে বাবুল খান নামের এক ক্রেতা বলেন, আগে বলতো গরিব মাংস কিনে খেতে পারছে না। এখন গরিব নয়, মধ্যবিত্তরাও গরুর মাংস কিনতে পারে না। আর নিত্যপণ্যের দামের কথা বলে লাভ নেই। যখন যার খুশি দাম বাড়ায়, এসব দেখার কেউ নেই। গত সপ্তাহে হঠাৎ কারণ ছাড়াই পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বাড়ালো, ক্রেতাদের পকেট কাটল। সরকার কি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে। বাজেটও বলে ব্যবসাবান্ধব। তাহলে আর আমাদের কথা বলে লাভ কী? আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট করেই বেঁচে থাকতে হবে।