রাঙ্গামাটির সীমান্তবর্তী বরকল উপজেলার দুর্গম ভূষণছড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালের ৩০ মে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর সদস্যরা নারী-শিশুসহ ৪৫০ বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।
সেদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়। শান্তিবাহিনীর ১২৫ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। এতে অসংখ্য বাঙালি আহত হয়েছিলেন। পুড়ে ছাই হয়ে যায় চার শতাধিক বসতবাড়ি।
গণহত্যায় ১০ জন স্বজন হারানো নব্বই-ঊর্ধ্ব গুনাই বিবি বলেন, আমি আমার স্বামী, ৬ সন্তানসহ ১০ জনের বেশি স্বজন হারিয়েছি। সেই গণহত্যার ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা কোনো বিচার পাইনি। আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। আমরা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।
বরকল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহআলম বলেন, এই গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। আজ পর্যন্ত এই গণহত্যার বিচার না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি।
দিনটি উপলক্ষে শনিবার বিকেলে বরকল উপজেলার ভূষণছড়া গ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) উপজেলা শাখার আয়োজনে ফারুক ই আযম (রা.) দাখিল মাদরাসার মিলনায়তনে ৪১ বছর আগে নৃশংস গণহত্যার বিচারের দাবিতে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ বরকল উপজেলা শাখার সভাপতি তসলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল গাজীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশিদ, ভূষণছড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক আবু বক্কর সিদ্দিক, শাহ আলম সওদাগর, মো. আব্দুল হালিম, সুলতান আহমেদ মন্ডল, ভূষণছড়া ইউপির সাবেক সদস্য আব্দুল জলিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি কামাল উদ্দিনসহ গনহত্যার শিকার স্বজনরা আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা সভার পর গণহত্যায় নিহতদের কবর জিয়ারত, মিলাদ এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
এ ছাড়াও এদিনে নিহতদের স্মরণে স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ৫০০ হতদরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়।