তাদের মতে, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এখন কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় মনোনিবেশ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে প্রাণ-প্রকৃতি ঠিক রাখার কাজে। কৃষকরা যেন পরিবেশ, মাটি, পানি, বাতাসের কোনো ক্ষতি না করে ফসল উৎপাদন করতে পারেন, সেজন্য সরকারকে কিছু নিয়মনীতি তৈরি করে দিতে হবে। নিয়মনীতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও রাখতে হবে অগ্রণী ভূমিকা।
বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা, গবেষক, ব্যবসায়ী, পরিবেশবিদ, শীর্ষ নির্বাহী, প্রান্তিক কৃষকসহ খাতসংশ্লিষ্ট সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ আয়োজনটি সাজানো হয় তিন অধিবেশনে। আর এসব অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও শেখ বশিরউদ্দীন।
‘খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা’ বিষয়ক প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এ সেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, টি কে গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার, এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান।
খাদ্যনিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে কৃষকের দিকটা সেভাবে দেখা হয় না বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করতে গিয়ে কোনো ক্ষতি করছি কিনা সেটিও দেখতে হবে। কারণ এর কারণে গবাদিপশুর ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এখানে ভোক্তার দিকটাও দেখতে হবে যেন তারা নিরাপদ খাদ্য পায়। আবার কৃষকের দিকটাও দেখতে হবে যেন তারা উৎপাদন করে লাভবান হন। খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস যাতে না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।’
ফরিদা আখতার বলেন, ‘বিশ্লেষণ ছাড়াই বিদেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানিতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার যে বছর ভালো ফসল হয়, সেই বছর পণ্যের দাম পড়ে যায়, কৃষকের আয় কম হয়। শহুরে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা দিতে গিয়ে, দাম নাগালে রাখতে গিয়ে কৃষকের ক্ষতি করছি। ফলে খাদ্যনিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত খাদ্য সার্বভৌমত্বে। খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের অধিকার নিশ্চিত হবে।’
‘কৃষি উৎপাদন ও প্রাণ-প্রকৃতি’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়া মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি খুশি কবীর ও গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন।
এ অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কৃষিজমি ও কৃষকের স্বার্থ বাদ দিয়ে আমরা কৃষির কথা বলতে পারব না। আজকাল আধুনিক কৃষির নামে এ দেশে অনেক কিছু নিয়ে আসা হচ্ছে, যেগুলো অন্যান্য দেশে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। কিংবা পরীক্ষা শেষে অনুমোদন দেয়া হয়নি অথবা আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। আমাদের কৃষি ও নিজস্ব বীজকে বাঁচাতে এ ব্যাপারগুলোয় সতর্ক হতে হবে যে আরো বেশি মুনাফা ও উৎপাদনের লোভে যেন অপরীক্ষিত ও সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসেবে সনদ পায়নি এমন কিছু বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ না করাই।’ মানুষকে খাদ্যনিরাপত্তা দেয়া, পরিবেশ সংরক্ষণ ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুই-তিন মাসের মধ্যে কৃষিজমি সুরক্ষা আইন পাস হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন নিয়ে অনেক কথা হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ দেখিনি। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে। আরেকটা সভা করে অংশীদারদের মতামত নিয়ে আশা করি দুই-তিন মাসের মধ্যেই আইনটা পাস করতে পারব।’
সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ অধিবেশনটি হয় ‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ বিষয়ে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল, কাজী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান, কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের পরিচালক এম সাফির রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের (স্বপ্ন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘গত বছর দেশে আলু উৎপাদন ছিল এক কোটি টনের বেশি। কিন্তু সেই আলুর দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকার ওপরে উঠেছিল। অর্থাৎ পরিসংখ্যান মিলছে না। তথ্য-উপাত্ত সঠিক না থাকায় মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি হচ্ছে, যা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধান্বিত করে ফেলছে। কবে দেশের এ পরিসংখ্যান ঠিক হবে তা আমার জানা নেই। কারণ এটা আমার আওতার মধ্যে নেই।’
তিনটি অধিবেশনেই অতিথি ও প্যানেল আলোচকদের পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষক ও বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রথম অধিবেশনে নেত্রকোনার কৃষক আরশাদ মিয়া ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ধান তুলে গুদামে নিই তখন সেখানে ঠিকমতো দাম পাওয়া যায় না। সরকারি গুদামে ধান বিক্রির পর সে টাকা সংগ্রহ করতেও আমাদের অনেক ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে।’
পণ্য উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সাতক্ষীরার কৃষকরা নিরাপদ ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেন ওই এলাকার কৃষক গোলাম সরোয়ার। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত লবণ পানি ও অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘেরের কারণে জমি নষ্ট হচ্ছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই লবণ পানি থেকে কৃষিকে বাঁচাতে এবং রাসায়নিকের ব্যবহারের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি।’
ময়মনসিংহের কৃষক আমানুল্লাহ বলেন, ‘ফসলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিবর্তে সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করলে কৃষকের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুরগি খামারি মানিক হাজারি বলেন, ‘মুরগি বিক্রির ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা করছে। এক্ষেত্রে সরকার যদি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করতে পারে তাহলে খামারিরা লাভবান হতে পারবেন। অন্যথায় অনেক প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে যাবে।’
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. এমএ সোবহান বলেন, ‘আমরা ধান গাছ ছোট করছি আর ছড়া লম্বা করছি। অর্থাৎ নাড়া (গরুর খাদ্য) আর গোড়া (মাটির খাদ্য) নিয়ে চিন্তা করছি না। পরিবেশ প্রকৃতির কথা বলছি কিন্তু সেটি কীভাবে রক্ষা পাবে তাহলে? কৃষিকাজ কোথায় করব আমরা? মাটিতে? সেই মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে কি ভাবছি? মাটির গভীর থেকে পানি তুলে আনছি, সঙ্গে আর্সেনিক নামক বিষও নিয়ে আসছি। অন্যদিকে কীটনাশক ব্যবহার করে প্রকৃতিতে থাকা উপকারী কীট সব ধ্বংস করে ফেলছি। আমাদের প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে, না হলে কৃষিকাজ করা সম্ভব হবে না।’
চাহিদা অনুযায়ী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব হলে পোলট্রি খাতে অস্থিরতা কমবে বলে উল্লেখ করেন আকিজ এগ্রো ফিড লিমিটেডের সিইও এটিএম হাবিব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দেশে সপ্তাহে দুই কোটি মুরগির বাচ্চার চাহিদা রয়েছে। এই দুই কোটি পরিকল্পনামাফিক উৎপাদন করা যায় না। কখনো বেশি কখনো কম করতে হয়। এই যে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্টভাবে দুই কোটি উৎপাদন করা যায় না, কম-বেশি করতে হয়। এ গ্যাপটাই এ খাতে অস্থিরতার কারণ। এ জায়গাটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব। বছরে মুরগির বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার, বাচ্চার বাজার ৬ হাজার কোটি টাকার, ফিডের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকার।’
দ্বিতীয় অধিবেশনে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৃষক হিমাংশু মণ্ডল বলেন, ‘বাস্তবে কৃষিকাজ করতে গেলে খাতা-কলমের কৃষির কথা দিয়ে কাজ হবে না। আমার এলাকার মাটিতে লবণ, নিচে লবণ। লবণ নিয়েই আমাদের বাঁচতে হয়। সেজন্য আমি পুকুর খনন করে সেখানে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে সবজি ও ফসল উৎপাদন করি, আবার পানিতে মাছ চাষ করি। এভাবেই বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদা পারভীন বলেন, ‘আমাদের দেশে খাদ্যদূষণের অন্যতম উপাদান ল্যান্ডফিল। দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত গন্তব্য হচ্ছে এ ল্যান্ডফিল। মাতুয়াইল ও আমিনবাজারের আশপাশের এলাকাগুলোয় গবেষণা করে দেখেছি যে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের চতুর্দিকে এক কিলোমিটার অঞ্চলে যত ভূগর্ভস্থ পানি আছে, সবগুলোয় আমরা ভারী ধাতব বস্তু পেয়েছি। সেখানকার সবজি ও ফসলেও ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। গত তিন বছরের গবেষণায় মাছ, চিনি, লবণ প্রতিটি খাবারেই মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। ১৮ প্রজাতির মাছ গবেষণায় ৯৭ শতাংশেই মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছি। এ সবকিছুর পেছনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জড়িত। এ বিষয়ে আমাদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে।’
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘কীটনাশক আমাদের খাদ্য প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে। এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন কীটনাশক নিষিদ্ধ হলেও দুষ্কৃতকারীরা আবার তা ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি দেয়া দরকার।’
নেত্রকোনার কৃষক এম আরমান বিন মকবুল বলেন, ‘দেশে কৃষি নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও কৃষক নিয়ে কোনো গবেষণা হয় না। তাদের কোনো উন্নতি নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। সরকার বিষয়গুলো ভাববে বলে আশা করি।’
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, ‘মাটিতে লবণাক্ততা বাড়ার সঙ্গে মাটিতে কিছু ভারী ধাতু থাকে। এগুলো পরবর্তী সময়ে ফসলে চলে আসে। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখনই গবেষণা করা দরকার।’
তৃতীয় অধিবেশনে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘বাজারে সিন্ডিকেট থাকবে। এটা ন্যাচারাল। বাজারে সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে হলে কিছু ব্রড মেশিন দরকার। একে যদি কেউ সিন্ডিকেশন বলে, তাতে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি মনে করি, বাজার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা দরকার। তবে সরকার নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট আরো ভয়ংকর হতে পারে। এ বিষয়টি সামনে আনা দরকার।’
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট কিছু ভোক্তা আছে, যাদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। এর বাইরে বাজার নিয়ন্ত্রণের কিছুটা কাজ আমরা করি। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। অন্য ব্যবসায়ীদের মতো টিসিবিও কিছু সমস্যায় পড়ে সরকারি নিয়মকানুন বা বিধিনিষেধের কারণে। এই বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজটা কিন্তু সরকারের পক্ষে একা সম্ভব না। গ্রুপ অব কোম্পানি থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী সবাই যদি দেশের স্বার্থে একসঙ্গে এগিয়ে না আসি তাহলে সরকারের একার পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ বা পণ্যের মূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব না।’
সবজি রফতানিকারক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তথ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এখানে রিয়েল টাইম ডাটা আমাদের নেই। কতটুকু চাহিদা ও সরবরাহ এগুলোর তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যায় না। যেসব পাওয়া যায়, সেগুলো কয়েক বছরের পুরনো। উৎপাদন ও চাহিদা নিয়ে রিয়েল টাইম তথ্য থাকতে হবে।’
দিনব্যাপী এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ; বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সুরাইয়া আখতার জাহান; চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) খালেদা বেগম এবং পরিচালক (বিজ্ঞাপন ও নিরীক্ষা) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম; হকস বে অটোমোবাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হক; যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান; বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী; মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল আজম; প্রাইম ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নাজিম এ চৌধুরী; অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান্তি কুমার সাহা; ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ মোল্লা; উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. ওয়ালি উল্লাহ; ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল বারি; এশিয়া ইন্স্যুরেন্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইমাম শাহীন; এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ জামাল হাওলাদার; গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন খান চৌধুরী।
শিক্ষাবিদদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান; প্রাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. আবদুর রহমান; সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান; কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচএম জহিরুল হক; ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মো. শামসুল হুদা; আইইউবিএটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এবং মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন ও সাইফ শাহরুখ; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুরা শাম্মী ও ড. মির্জা এটিএম তানভীর রহমান; অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির সাবেক রেক্টর সিকদার আনোয়ার; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হামিদ; বিসিকের সাবেক পরিচালক আবু তাহের খান; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি) ড. শায়খ আহমদ; ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক তানজিলা আমির; আইডিয়াজ ফর ডেভেলপমেন্টের (আইএফডি) প্রতিষ্ঠাতা মাবরূর মাহমুদ।
উপস্থিত ছিলেন কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের পরিচালক এম বাসির রহমান ও উজায়ের হাফিজ, পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক আজিমা আক্তার, বহুজাতিক হার্ভেস্টপ্লাসের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আমিন, বেঙ্গল মিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম আসিফ, কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান, মেটালের উপদেষ্টা ও বিজনেস হেড ইঞ্জিনিয়ার মো. আবুল কাসেম, আকিজ রিসোর্সের চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার মো. তৌফিক হাসান, বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক সেক্রেটারি ও মৃধা বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মামুন মৃধা, বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম, হাবিব, জহির আহমেদ, মোক্তার আলম, মইনুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, একেএম মাসুদুর রহমান, কামরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, তারেক হাসান, নাজমুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, রিজওয়ান মাহমুদ, মনিরুজ্জামান, মিলন ও দেবাশীষ চ্যাটার্জি। জুট অ্যান্ড ব্যাগস এক্সপোর্ট করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা এনামুল হক পাটোয়ারি, রানী ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আরিফ হোসেন খান, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কৃষি ও কৃষিভিত্তিক খাতের আহ্বায়ক মো. মামুনুর রহমান। চাল রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাকুল হোসেন সুইট, সুমন ডাল মিলের প্রতিষ্ঠাতা মো. নেসার উদ্দিন খান, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মাওলা, ফিরোজা কনজিউমার প্রডাক্টসের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ ফারুক, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির মোহাম্মদ আলী ভুট্টো। বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফিটা) সভাপতি এএম আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সহসভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন খান, মহাসচিব জয়ন্ত কুমার দেব, যুগ্ম মহাসচিব মো. মাহবুবুল আলম, কোষাধ্যক্ষ মো. খোরশেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাপ হোসেন বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক আবদুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. এনামুল হক মোল্ল্যা।
পরিবেশবিদদের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি মো. ফজলে রেজা সুমন ও সদস্য সানজিদা শারমিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক হাসান খান ও হুমায়ুন কবির সুমন, নির্বাহী সদস্য জাভেদ জাহান, জাতীয় পরিষদ সদস্য তরিকুল ইসলাম রাতুল ও ফাহমিদা নাজনীন, রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন, বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না, নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস, সদস্য আশরাফুল কবির কনক, রিমি কবিতা ও আবদুর রহিম, পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের (ইআরপিডিএফ) চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন, মহাসচিব মো. আমিনুল ইসলাম আমিন, চাঁদপুর জেলা সভাপতি মুসাদ্দেক আল আকি, নদী পরিব্রাজক দলের জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. মনিরুজ্জামান, অফিস সেক্রেটারি মো. রবিউল ইসলাম, পানিসম্পদ সেক্রেটারি মো. আমীর হামজা খান ও সহপ্রচার সম্পাদক শাহীন মিয়া, প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন (আইইউসিএন) প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট সমীর সাহা, ইনসা অর্গানিক এগ্রোফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইস্রাফিল হোসাইন, নদী গবেষক এআরএম খালেকুজ্জামান, নাগরিক অধিকারকর্মী মিজানুর রহমান এবং পরিবেশ ও জলবায়ু ন্যায়বিচারকর্মী নয়ন সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) আবদুল্ল্যাহ আল মামুন ফয়সাল, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ উসমান হাদী, সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল জাবের, বাংলাদেশ স্টাডি ফোরামের (বিডিএসএফ) প্রেসিডেন্ট তাসনীম আহমেদ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফকাত আলম আঁখি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সুলতানা জেসমিন জুঁই, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকবর খান, সাতক্ষীরার কৃষক হিমাংশু মণ্ডল, নেত্রকোনার কৃষক মুহা. এম আরমান বিন মকবুল ও ময়মনসিংহের কৃষক মো. আমান উল্লাহ।
দিনব্যাপী এ সম্মেলনের লিড স্পন্সর ছিল কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেড। প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে ছিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও আকিজ ফিড। আর গোল্ড স্পন্সর ছিল ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি) ও এসিআই এগ্রিবিজনেস। এছাড়া সিলভার স্পন্সর হিসেবে মেটাল, সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসি ও এসকিউ এগ্রিকালচার লিমিটেড অংশীদার ছিল।