ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে কোনো উন্নতি নেই কয়েকটি ব্যাংকের। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নতুন করে ১টিসহ মোট ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৫টি, বিশেষায়িত দুটি ও বেসরকারি খাতের ৪টি ব্যাংক রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ন্যূনতম পরিমাণ হিসাবে মূলধন রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে মূলধন সংরক্ষণের এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি ১১ ব্যাংক।
তবে এ সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের মূলধন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ব্যাংকিং খাতে মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ২৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়। কোনো ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। তবে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এতে করে সার্বিক উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের প্রান্তিক গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এদিকে ২০১৬ সাল থেকে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার বা আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসাবে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের আওতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শূন্য দশমিক ৬২৫, ২০১৭ সালে ১ দশমিক ২৫, ২০১৮ সালে ১ দশমিক ৮৭৫ ও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এই বাড়তি পুঁজি সংরক্ষণের নির্দেশনা ছিল। এভাবে ন্যূনতম মূলধন এবং সংস্থান বজায় রেখে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হারের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১০ দশমিক ৬২৫, ১১ দশমিক ২৫, ১১ দশমিক ৮৭৫ ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীতি করার কথা বলা ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ৬০ ব্যাংকের মধ্যে ৪৬টির মূলধন সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে আছে। ঘাটতিতে থাকা ১০ ব্যাংকসহ ১৪ ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণ এর কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কোনো ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন বজায় রাখার পর বাফার আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হারে মূলধন রাখতে না পারে, সেই ব্যাংক কোনো নগদ লভ্যাংশ বা বোনাস দিতে পারবে না। তবে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিয়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারে।