সিরাজগঞ্জে ধানক্ষেত থেকে নিখোঁজ রাশিদুল নামে এক পিকআপ চালকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ক্লু লেস হিসেবে থেকে যাওয়া মামলাটির রহস্য উদঘাটন হয়েছে। পুলিশ জানায়, মো. সেলিম হোসেন নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাকে ফিরে পেতে এবং স্ত্রীর প্রেমিককে ফাঁসাতে গলাকেটে হত্যা করা হয় বন্ধু রাশিদুলকে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা অফিসার ইনচার্জ মো. একরামুল হোসাইন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
নিহত রাশেদুল ইসলাম (৪০) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর শহরের ওয়াপদা বাঁধ এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে এবং পেশায় পিকআপ চালক ছিলেন। তার বন্ধু মো. সেলিম।
ডিবির ওসি একরামুল হোসাইন জানান, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিখোঁজ হন পিকআপ চালক রাশিদুল ইসলাম। শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে তাড়াশ পৌরসভার আসানবাড়ি এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে নিখোঁজ তারা গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই ক্লুলেস এই হত্যা মামলার তদন্তে নামে জেলা পুলিশ। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আসানবাড়ি গ্রামের রাশেদুল ইসলামের বন্ধু মো. সেলিম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, ঘুমের ওষুধযুক্ত কোমল পানীয়, মানিব্যাগ, রাশিদুলের মোবাইল ও একটি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করলে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
তিনি জানান, সেলিমের স্ত্রী শেরজা পাশের গ্রামের আউয়াল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে যান। কিন্তু তালাক না হওয়ায় স্ত্রীকে ফিরে পেতে মরিয়া ছিলেন সেলিম। এই কারণে আউয়ালের প্রতি ক্ষোভ জমতে থাকে। পরে স্ত্রী শেরজার ব্যাগে প্রেমিক আউয়ালের একটি মানিব্যাগ, ছবি, সিমের কাগজ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি খুঁজে পান তিনি। তখনই পরিকল্পনা করেন, বন্ধুকে হত্যা করে সেই মানিব্যাগ মরদেহের পাশে রেখে দিলে আউয়ালকে ফাঁসানো যাবে এবং স্ত্রীকে ফিরে পাওয়া যাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পহেলা বৈশাখের আগে সেলিম একটি মেমোরি কার্ড, ঘুমের ওষুধ ও বাংলা মদ সংগ্রহ করেন। ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাশিদুলকে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ধানক্ষেতে নিয়ে যান। কোমল পানীয়র সঙ্গে মিশিয়ে দেন ঘুমের ওষুধ, আর আরেক বোতলে রাখেন শুধুই মদ। রাশেদুল অচেতন হলে কোমর থেকে ছুরি বের করে তাকে গলাকেটে হত্যা করেন। পরে ধানক্ষেতেই লাশ ফেলে রেখে বাড়ি ফিরে যান তিনি।
ওসি একরামুল হোসাইন বলেন, বন্ধু রাশেদুলকে হত্যা করে স্ত্রীর প্রেমিক আউয়ালের পরিচয় শনাক্তের কিছু জিনিস লাশের পাশে রাখেন সেলিম। যেন, সবাই সন্দেহ করে আউয়াল হত্যা করেছে। আউয়াল ফেঁসে গেলে সে আবার তার স্ত্রীকে ফিরে পেতেন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাশিদুলকে হত্যা করা হয়।