গ্রামে সেখানে-সেখানে বাড়িঘর বা অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করার আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিতে হবে অনুমতি। এক্ষেত্রে দিতে হবে নির্দিষ্ট ফি- এমনটাই পরিকল্পনা করছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গ্রামে বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। যে যেখানে ইচ্ছে সেখানেই বাড়িঘর নির্মাণ করছে। এতে একদিকে কৃষিজমি কমছে, অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণের ফলে ইউটিলিটি সুবিধাসহ অন্য নাগরিক সুবিধা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গ্রামে বাড়িঘরসহ অবকাঠামো নির্মাণে অনুমতির জন্য নতুন করে ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদেরও এ পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রামে বাড়িঘর নির্মাণ করতে এখনও ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ অনুমতি নেওয়া হয় না। ঢাকা শহরে তো অনেকগুলো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। তবুও এখানে অপরিকল্পিতভাবে অনেক কিছু হয়ে গেছে। খাল ভরাটসহ যে যেভাবে খুশি, ভবন নির্মাণ করেছে। এসব বিষয় ব্যবস্থাপনার আওতায় না এলে দেশ এগিয়ে যাবে না।
কীভাবে বাস্তবায়িত হবে এ পরিকল্পনা?
তাজুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা প্রশাসনসহ সবাই মিলে কীভাবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা ভাবছি। এ বিষয়ে আইনি কাঠামো থাকা উচিত। এখন প্রাথমিকভাবে হয়তো কোনো বিদ্যমান আইনের সাহায্য নেব। অর্থাৎ বিদ্যমান কোনো আইনের অধীনে বিধি করার চেষ্টা করবো।
কত টাকা হবে ফি?
মন্ত্রী বলেন, যে ফি নির্ধারণ হবে তা খুবই সহনীয় হবে। লাখ-লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি বানাবে, সরকারকে কি এক বা দুই হাজার টাকা ফি দিতে পারবে না?
তিনি বলেন, বাড়ি নির্মাণে ১০ লাখ টাকা খরচ হলে হয়তো ১ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। ৫০ লাখ টাকা লাগলে সেক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এভাবে কাঠামো দাঁড় করাবো।
মন্ত্রী আরও বলেন, এ টাকা দিলে আমরা হয়তো সেখানে লোকজন নিয়োগসহ অনেক কাজ করতে পারবো। এর মাধ্যমে সেবাও বাড়বে। মোটকথা আমরা আলোচনা করে একটি কাঠামো দাঁড় করাবো।’
যারা মানবে না কী হবে শাস্তি?
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পনাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা এসব বিষয় নিয়ে ভাবছি। আমিতো সারাজীবন মন্ত্রী থাকবো না। আমার দায়িত্ব পালনের সময়ে একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করবো, এই চিন্তা আমরা মাথায় আছে।
অনুমতি দেওয়ার জন্য সক্ষমতা আছে ইউনিয়ন পরিষদের?
বাড়ি-ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমতির জন্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সেই সক্ষমতা আছে কী না-তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, না, ইউনিয়ন পরিষদের সেই সক্ষমতা নেই। তবে এ প্রতিষ্ঠান ছাড়া গ্রামে আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সক্ষমতা কার আছে সেখানে? আর কাকে দিয়ে করাবো? কাউকে না কাউকে দিয়ে তো করাতে হবেই।
তিনি বলেন, সেখানে শৃঙ্খলা আনার জন্য কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করতে হবে, মানে সেখান থেকেই অনুমতি লাগবে। সবাইকে নিয়মের মধ্যে আসা উচিত। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সব জায়গায় ইউটিলিটি সাপোর্ট দিতে হবে। এগুলো করতে গেলে সবাইকে নিয়মের ভেতরে না আসা ছাড়া উপায় নেই।
হয়রানির আশঙ্কা
বিভিন্ন ইস্যুতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ কম নয়। অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের নতুনভাবে দায়িত্ব দিলে হয়রানির আশঙ্কা করছেন অনেকে।
রিমন নামে কুমিল্লার একজন ব্যবসায়ী বলেন, নতুন করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বররা মানুষকে হয়রানি করতে পারে। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধেও যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই চিন্তাও সরকারের মাথায় রাখা উচিত।
নাঈম নামে নারায়ণগঞ্জের একজন বাসিন্দা বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ ভালো। তবে চেয়ারম্যান-মেম্বরদের এখানে সৎ থাকতে হবে। না হলে আমাদের পদে-পদে হয়রানির শিকার হতে হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, হয়রানি অনেক জায়গায়ই হয়। কিন্তু কাউকে না কাউকে দিয়ে তো কাজটি করাতে হবে। হয়রানির বিষয়টি আমার মাথায় আছে। যতটুকু কম হয়রানির মধ্য দিয়ে বিধি-বিধানগুলো পালন করা যায় এবং এটি বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি করার চেষ্টা করবো।
প্রকৌশলীদের যুক্ত না করলে সুফলের জায়গায় হবে কুফল
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভবন নির্মাণের অনুমতির জন্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হবে। শুধুমাত্র চেয়ারম্যান-মেম্বর দিয়ে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই এ পরিকল্পনায় প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। না হলে এ উদ্যোগের সুফল হবে না।