প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত করার বরাদ্দ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না। বাজেট ঘোষণার আগে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকছে- এমন খবরে অনেকটা উচ্ছ্বসিত হলেও বাজেট ঘোষণার পর ঠিক ততটাই হতাশায় ভুগছেন প্রায় সাত হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।
শুক্রবার (৪ জুন) বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে লিখিত প্রশ্ন করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। ফলে এমপিওভুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী হতাশা ভুগছেন। এমওপিভুক্তিতে বরাদ্দ রাখা না হলে তারা আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে ৭১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মূল বাজেটের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা বাজেটের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাজেট বক্তৃতায় নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ না করায় শিক্ষকরা হতাশ। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মুজিববর্ষে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ঈদ বোনাস, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে ওই দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকরাও বাজেট নিয়ে খুশি হতে পারেননি।
জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর পর ২০১৯ সালে দুই হাজার ৫৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। তখন এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এরমধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ১৪১টি প্রতিষ্ঠান বাতিল করা হয়। পরবর্তী দুই বছরে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে সারা দেশে সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পৌনে দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন।
নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সংশোধিত এমপিও নীতিমালা জারি করেছে। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে এমওপিও খাতে বরাদ্দ রাখা হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন বাজেট বক্তৃতায় পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা খাত নিয়ে কোনো চমক ছিল না। তিনি বিগত বছরের কার্যক্রমই তুলে ধরেছেন। যদি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হতো তাহলে বাজেট বক্তৃতায় তা উল্লেখ করতেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে শিক্ষা খাতের প্রধান চমক হলো এমপিওভুক্তি। সারা দেশের শিক্ষকরা এই ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করেন।
তবে চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে চার হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সরকার ইচ্ছা করলে এ বরাদ্দ থেকে বা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারে।
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, বাজেটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও তারা কিছু বলতে পারেননি। আমাদের দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেছেন। বাজেটে এমপিওখাতে বরাদ্দ রাখা না হলে আন্দোলন ছাড়া উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা সবচেয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। সরকার সামান্য অনুদান দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক অনুদান তুলতে পারেননি। এমপিওভুক্তি না করলেও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আগামী অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ আছে কি-না তা বিস্তারিত বাজেট দেখে জানা যাবে। দুয়েকদিনের মধ্যে আমরা এ ব্যাপারে জানতে পারব।