সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা। পরে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩ বছরে মামলা হয়েছে প্রায় চার হাজার। সত্যতা না পাওয়ায় শুরুতেই খারিজ হয়ে গেছে অর্ধেক অভিযোগ। আইনবিদরা বলছেন, এ আইনে মামলা হলেই গ্রেপ্তার, মেলে না জামিনও। ফলে কাউকে হয়রানি করার শক্তিশালী হাতিয়ার এ আইন। তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার না করার বিধান তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
আইন পাসের পর শুধু ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালেই মামলা হয়েছে এক হাজার ৫০৪ টি। প্রাথমিকভাবেই ৬৩৩ টি খারিজ করে দেয় আদালত। আর তিন বছর ধরে তদন্ত চলছে ৮৭১ টির। আগের আইসিটি আইন ও বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা সারা দেশের মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে। এই আদালতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা এসেছে ২ হাজার ৬৮২টি। এর অর্ধেকের বেশি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলা।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গত সাত বছরে ৯৯০টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে চার শর বেশি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়। অনেক মামলায় অভিযোগ গঠনের উপাদান না থাকায় আসামিরা অব্যাহতি পান। তথ্য-উপাত্ত বলছে, কেবল ২৫টি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। এর ২৪টি আইসিটি আইনের এবং একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা। আইনজীবী বলছেন, বেশিরভাগই আপসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলার শিকার ব্যক্তিরও আইনি প্রতিকার পাওয়ার বিধান নেই। বেশিরভাগ মামলাই হয় ২৫ ও ২৯ ধারায়। যাতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও মানহানির অভিযোগ তোলা হয়। ফলে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তার না করা, জামিন দেয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান করার পরামর্শ এই আইনবিদদের। এদিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল–১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত বছরই সারা দেশে লেখক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে অন্তত ৪১টি। এসব মামলায় ৭৫ জন লেখক ও সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২ জন। গত বছর বিভিন্ন পেশার ৩৬৮ জনের বিরুদ্ধে এই আইনে ১৯৭টি মামলা হয়েছে।
অবশ্য পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সংখ্যাটি আরও বেশি। গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই এই আইনে মামলা হয় ৪০৩টি, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৫৩ জন। এরপরের সাত মাসের হিসাব পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আর পাওয়া যায়নি। তবে, বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ। কারণ অনেক মামলার খবরই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়না। তাই মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তার খোঁজ পায়না। ফলে তাদের সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। এরই মধ্যে মামলার চাপ সামলাতে এপ্রিলে গঠন করা হয়েছে আরো সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ফলে জেলাভিত্তিক মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট পাঠানো হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে।