সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা ও বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে উল্লেক করা হয়েছে এ তথ্য। প্রবন্ধটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিভাগের অধ্যাপক ইমানুয়েলা গ্যাকিদৌ।
প্রবন্ধটি লেখার জন্য বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের লোকজনের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও বিশ্লেষণ করতে হয়েছে অধ্যাপক ইমানুয়েলাকে। এ গবেষণায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটসের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা গেটস ফাউন্ডেশন।
গবেষণা শুরুর পর ইমানুয়েলা জানতে পারেন, গত তিন দশকে বিশ্বে শারীরিকভাবে স্থুল লোকজনের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
২০২১ সালে পৃথিবীতে ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে স্থুলতায় আক্রান্তদের সংখ্যা ছিল ৪৯ কোটি ৩০ লাখ এবং স্থুলতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা ছিল ২১০ কোটি।
ঠিক কী কারণে শারীরিকভাবে স্থুল লোকজনের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে, বলা মুশকিল। কারণ এর সঙ্গে অনেক কিছু সংশ্লিষ্ট। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় স্বল্পেন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থুলতা ছড়িয়ে পড়ার হার অনেক বেশি।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, গত তিন দশকে আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে শতকরা হিসেবে স্থুল লোকজনদের হার বেড়েছে অন্তত ২৫০ শতাংশ। বর্তমানে সাব-সাহারান অঞ্চলের ৮ দেশ অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, বতসোয়ানা, বুরকিনা ফাসো, বেনিন, কাবো ভার্দে, ক্যামেরুন এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের ৫২ কোটি ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২০ কোটি শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক শারীরিক স্থুলতায় ভুগছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ইমানুয়েলা।
উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে যে শারীরকভাবে স্থুল লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে, তা স্বীকার করেছেন শারীরিক স্থুলতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফেডারেশন।
ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সিমন বারকুয়েরা এএফপিকে বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্থুল লোকজন ও শিশুদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে এবং আগামী ২০৩৫ সালে এসব দেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ এবং শিশুদের ৮৮ শতাংশই স্থুলতায় আক্রান্ত হবে।
ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, খাবারে শর্করার হার বেশি থাকা, খেলাধূলা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে দিনি বাড়ছে স্থুল লোকজনের সংখ্যা। স্থুলতার সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার ও ব্রেইন স্ট্রোকসহ বিভন্ন শারীরিক সমস্যা এবং রোগের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে।