দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলেছেন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যরা। তারা বলেন, সীমান্তবর্তী (রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, এবং খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট) এলাকায় সংক্রমণের উচ্চহার দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও আরও কিছু জেলাতে উচ্চ সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। উপরন্তু, ইতোমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরেও বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। গত ৩০ ও ৩১ মে জুমের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৬ ও ৩৭তম সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এ সময় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। ৩১ মের ৩৭তম সভায় খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, লোকমান হোসেন মিয়া, সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতর আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই এবং এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য মন্তব্য করে নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ গ্রহণ করে।
১. দেশব্যাপী জারি করা সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
ক) সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা।
খ) রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা (টেক-অ্যাওয়ে ব্যবস্থা চলতে পারে)
গ) সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা
ঘ) পর্যটন স্থান/ বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা
২. সংক্রমণের উচ্চহার বিবেচনায় সীমান্ত এলাকাসমূহ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে।
ক) সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া।
খ) জরুরি সেবায় নিয়োজিত ছাড়া জনগণকে বাড়িতে থাকার আদেশ দেয়া।
গ) সীমান্তবর্তী জেলা সমূহে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।
ঘ) তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে প্রশাসনকে ক্ষমতা দেয়া।
৩. সীমান্তবর্তী সকল জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা প্রয়োজন।
৪. জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নিশ্চিত করণের উদ্দেশ্যে কঠোর মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। এই বিষয়ে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় দূরীকরণে আইন সংশোধন করা যেতে পারে।
৬. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধের প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা।
সভায় বলা হয়, ব্লাক ফাঙ্গাস একটি ফাঙ্গাস জনিত সংক্রমণ যা নতুন নয়। এই সংক্রমণ আগেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। এরই প্রেক্ষিতে এই সংক্রমণ দেখা যেতে পারে।
এ রোগের সংক্রমণ রোধে পরামর্শক কমিটি নিম্নলিখিত সুপারিশ করেন
১. কোভিড-১৯ চিকিৎসা গাইড লাইনে ব্লাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভূক্তকরণ
ক. প্রয়োজনীয় ওষুধের মজুদ সংরক্ষণ।
খ. স্টেরয়েডের যৌক্তিক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
ভারতের ব্লাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের সাথে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এদেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে এজন্য এখনই প্রস্তুত করার পরামর্শ দেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১ জুন) রাতে সভাপতি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।