ক্রিকেটকে বলা হয় ‘জেন্টলম্যান’স গেম’ বা ভদ্রলোকের খেলা। সেই খেলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে রাজনীতি বা কূটনীতির মতো বিষয়। ব্যতিক্রম নয় ভারতীয় উপমহাদেশও। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে দু’দেশের মানুষের উন্মাদনা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখা হয় এই ম্যাচকে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজের উত্তেজনাকেও ছাপিয়ে যায় ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। রাজনৈতিক কারণে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ আছে অনেকদিন। তবুও আইসিসির ইভেন্টগুলোতে মুখোমুখি হলে আলাদা আবহ তৈরি হয়।
ভারত-পাকিস্তানের উন্মাদনার স্বাদ এখন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে খুঁজে পান অনেকে। দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনাও মিশে যাচ্ছে ক্রিকেটের এই উত্তাপে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আগামী (বৃহস্পতিবার) দুই প্রতিবেশী দেশ মুখোমুখি লড়াইয়ে নামছে। ভারত-পাকিস্তান হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের চেয়ে কোনো অংশে কম আলোচনা হচ্ছে না এই ম্যাচ ঘিরে।
খেলার মাঠে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর সাফল্যের অনেকটাই ক্রিকেটকেন্দ্রিক। হকিতে ভারত, পাকিস্তানের রমরমার দিন অতীত। অন্য খেলাগুলোতেও সাফল্যের ইতিহাস দীর্ঘ এবং ধারাবাহিক নয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লড়াই, উৎসাহ, উত্তেজনা, রেষারেষি।
অনেকের মতে, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ হওয়ার পর ভারতীয় উপমহাদেশে এখন সবচেয়ে উন্মাদনাময় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার লড়াই। যা কয়েক গুণ বেড়েছে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিবের সেই টাইমড আউট কাণ্ড ঘিরে। এদিকে, বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা লাভের পেছনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার বিশেষ ভূমিকা ছিল।
দুই দেশের বাইশগজে উত্তাপটা গত এক যুগ ধরেই দেখা যাচ্ছে। ভারতকে হারিয়ে দেওয়া, বিতর্কিত আম্পায়ারিং কিংবা টান টান উত্তেজনার লড়াই-বিগত দিনগুলোতে দুই দেশের মাঠের চিত্রটা অনেকটা এমনই। গত আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তাপটা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্রিকেটের মাঠেও এবার আগের চেয়ে বেশি উত্তেজনার পারদ চড়বে।
আগামীকাল পর্দা উঠছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। এবারের আসরে একই গ্রুপে পড়েছে উপমহাদেশের তিন দল ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে চেনা সেই উত্তেজনার আঁচ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। উত্তেজনার নতুন উপাদান ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ। যাতে অবশ্যই ইন্ধন যোগাচ্ছে দুই দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট। দুই পাড়ের সমর্থকরাও চাইছে ২২ গজেই জবাব দিতে। যদিও পরিসংখ্যান বা শক্তিমত্তায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। তবে বাইশগজে টিম টাইগার্সের মুখোমুখিতে ভারতও কিছুটা নার্ভাস থাকে। এই টিম ইন্ডিয়াকেই বিশ্বকাপের মঞ্চে হারিয়ে দেওয়ার রেকর্ড আছে। এ ছাড়া বেশ কিছুবার কাছাকাছি গিয়েও বাগে আনতে পারেনি বাংলাদেশ।
লড়াইটা দুই দলের ক্রিকেটারদেরও
গত ইমার্জিং এশিয়া কাপের ম্যাচে সৌম্য সরকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন ভারতের হর্ষিত রানা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। এবার তারা দু’জনই রয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বাগ্যুদ্ধ নতুন নয়। ২০০৭ সালে একদিনের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ছিটকে গিয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচের আগে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা নড়াইলের ভাষায় রাহুল দ্রাবিড়ের দলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ধরে দিবানি।’ ২০১০ সালে বীরেন্দ্র শেহবাগ বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে সাধারণ মানের দল হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে রোহিত ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ‘নো’ বল হওয়ায়। সেই ‘নো’ বল নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। তখন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশেরই আহম মোস্তফা কামাল। বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনিও। সে বছরই ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো সিরিজ (ওডিআই) জিতেছিল বাংলাদেশ।
সেই সিরিজও বিতর্কহীন ছিল না। রান নেওয়ার সময় মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ধাক্কা দিয়েছিলেন রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকা মুস্তাফিজুর রহমানকে। মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন ফিজ। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাসের স্টাম্প আউট হওয়া নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। যা ধীরে ধীরে দু’দেশের ক্রিকেট সম্পর্ককে মধুর থেকে অম্লমধুর করে তুলেছে।