জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি আওয়ামী লীগ ইতিহাস মুছে ফেলেছিল। নিজেদের মনগড়া কথা এবং নিজেদের কৃতিত্ব রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তা টিকেনি। বিএনপি কোনো ইতিহাসকে অস্বীকার করছে না। করতে চায় না। কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছোট করা কিংবা বড় করার রাজনীতি বিএনপি করবে না। বিগত আমলের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস যাতে লেখা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারা তাদের প্রস্তাবে ১৬টি দফা তুলে ধরেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির তৈরি করা ঘোষণাপত্রের যে খসড়া পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে, এর সঙ্গে বিএনপির প্রস্তাবের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটিও যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করে দলটি। বিএনপি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধই বাংলাদেশের ভিত্তি।
‘ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করে সেটি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চায় বিএনপি। যেমনটা এর আগে ৩১ দফা ঘোষণার ক্ষেত্রে হয়েছিল। ইতোমধ্যে বিএনপি সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ আছে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা। বিগত ১৬ বছর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন ও তাদের ওপর নিপীড়নের কথা এসেছে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জবরদস্তিমূলক শাসন ও একনায়কতন্ত্র চালিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি ও মাফিয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। বিগত তিনটি বিতর্কিত ও সাজানো সংসদ নির্বাচনের কথা এসেছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি এবং এর বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন, সেই আন্দোলনে স্বৈরাচারী শাসনের নিপীড়ন, গণহত্যা ও গণ–অভ্যুত্থানের কথাও এসেছে।
বিএনপি তাদের প্রস্তাবে ১৬টি দফার প্রতিটির শুরুতেই ‘যেহেতু’ শব্দ ব্যবহার করেছে। শেষ দফায় তারা নির্বাচনের কথা এনেছে। বলা হয়েছে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বৈষম্যহীন সমাজের অভিপ্রায় থেকে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটে। অভ্যুত্থানের সূত্রপাত করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্রের দাবিতে প্রথম সোচ্চার হয় ডিসেম্বরে। ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটিও একই দাবি তোলে। অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতারা ২৮ ডিসেম্বর একযোগে ঘোষণা দেন বছরের শেষ দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশ হবে।
সে সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছিল, এর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নেই। তবে এক দিন পর জানায়, সরকার সহযোগিতা করবে। ৩০ ডিসেম্বর ছিল নাটকীয়তা পূর্ণ। সেই রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। মধ্যরাতে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তা থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।
এ দাবির পক্ষে জনমত গঠনে প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ করে ছাত্র নেতৃত্ব। ১৬ জানুয়ারি ‘সর্বদলীয়’ বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র তৈরি করতে একমত হন।