মুক্তির পর এখন চাকরি পুনর্বহালের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন আনোয়ার ও তার পরিবারের সদস্যরা।
আনোয়ার হোসেন নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের মৃত জয়নুল আবেদীনের ছেলে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আনোয়ার তৃতীয়। খেলোয়াড় কোটায় ২০০৬ সালে বিডিআরে যোগদান করেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেদিন আর্চারির প্রশিক্ষণে ছিলেন তিনি। এরপর মর্মান্তিক পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছয় মাস চাকরি করার পর ছুটি থেকে ফিরলে ওই বছরের ২৬ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে আনোয়ারের কারামুক্তির খবরে গ্রামের লোকজন তাকে দেখতে ভিড় করছেন বাড়িতে। তাকে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবার ও এলাকাবাসী।
অবিবাহিত আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে ছিলেন। পরিবারের অন্যান্যরা বিয়ে করে সন্তান নিয়ে সুখে থাকলেও আনোয়ারের মা ছাড়া নেই কেউ। আনোয়ারের বাবা প্রায় ৫ বছর আগে মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা ছিল আনোয়ারকে একনজর দেখার। কিন্তু দেখা তা দূরের কথা, মৃত্যুর সংবাদটিও আনোয়ার শুনেছেন প্রায় দুই মাস পর।
আনোয়ারের মা আলেয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে এসেছে, আমি তাতে খুশি। তবে তার বাবার মৃত্যুর আগে ইচ্ছে ছিল ছেলেকে একনজর দেখার। সেই একনজর দেখা আর হলো না। আজ ছেলে বাড়ি ফিরলেও তার বাবা কবরে শুয়ে আছে। আমার ছেলের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তাকে তার ন্যায্য ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আর কোনো বৈষম্য না হোক।
আনোয়ারের বোন সাজেদা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই আমাদের ঘরে ফিরে আসছে। তাতে আমরা অনেক খুশি। তবে তার মতো অনেক অসহায় ভাই এখনো ভেতরে আছেন। তাদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাদেরও ফাঁসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া। আর যেন কোনো পরিবারকে তাদের স্বজনদের এভাবে দিনের পর দিন কারাগারে না থাকতে হয়।
আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ায় ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। আমি খেলোয়াড় কোটায় যোগদান করেছিলাম। আমরা বিকট শব্দ শুনে ভেবেছিলাম প্রশিক্ষণের শব্দ। কিন্তু তারপর আমি ছয় মাস চাকরি করেছি। চাকরি থেকে ছুটিতে আসি। যেদিন যাই সেদিনই জানতে পারি আমার নামে ওয়ারেন্ট হয়েছে। আমি আত্মসমর্পণ করলে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ২৫ ফেব্রুয়ারি কী ঘটেছিল তা বলতে পারব না। নতুন করে তদন্ত করা হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস এখন সবকিছুরই সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা আমাকে দেখার জন্য ছটফট করতেন। উনি শেষ সময়ে কেবল আমার কথা বলতেন। আমি উনার মৃত্যুর সংবাদ টুকুও পাইনি। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি বাবা মারা গেছেন। আমি অবিবাহিত ছিলাম তাই বাবা-মা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করতেন।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনার বিষয়ে আনোয়ার বলেন, আমাদের বিডিআর সদস্যদের জন্য বিডিআর কল্যাণ পরিষদ নামে একটি গ্রুপ আছে। ওই পরিষদের মাধ্যমে আমাদের চাকরি পুনর্বহাল, আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়াসহ যে সিদ্ধান্ত আসবে আমি সেই সিদ্ধান্তে একমত। ব্যক্তিগতভাবে কোনো চাওয়া নেই।
আনোয়ারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে তার বাড়িতে এসেছেন বিডিআর কল্যাণ পরিষদ নোয়াখালী শাখার সদস্যরা। তাদের একজন বিডিআরের সাবেক ল্যান্স নায়েক মানিক হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাবন্দি ১৬ বছর মানে জীবনের অর্ধেক শেষ। আমি নিজেও ৫ বছর কারাবন্দি ছিলাম। আনোয়ার আজ পরিবারের কাছে বোঝা। তার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হোক। আনোয়ারের চাকরি ফিরিয়ে না দেওয়া হলে তার ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই থাকবে না। এতদিন জেলে না থাকলে হয়ত তার সুখের একটি সংসার থাকত।