বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সৌজন্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিজনেস ফোরাম’ শীর্ষক দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় সভা মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক এ মতবিনিময় সভায় ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বারর্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। ডিসিসিআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮৯ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬২৭ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ও ৬১ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ঔষধ, অর্গানিক কেমিক্যাল, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক এবং কৃষিপণ্য উল্লেখযোগ্য।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রচুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা, শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা, পণ্য পরিবহনে সরাসরি যোগাযোগ স্বল্পতা ও বন্দর সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যার নিরসন একান্ত অপরিহার্য।
এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাব করেন।
এফপিসিসিআই সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ বলেন, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
তিনি জানান, বাংলাদেশে পাকিস্তানের মোট রফতানির প্রায় ৫৫ শতাংশ আসে টেক্সটাইল ও পোশাক খাত থেকে, অপর দিকে বাংলাদেশের রফতানির সিংহভাগই নির্ভর করে তৈরি পোশাক খাতের ওপর, তাই আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে আরও নতুন পণ্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। পাকিস্তান থেকে কৃষিপণ্য, চাল, সিরামিকসহ অন্যান্য পণ্য আরও বেশি হারে আমদানির জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
তথ্য-প্রযুক্তি ও মোবাইল ফিন্যান্সিং খাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে উল্লেখ করে আতিফ ইকরাম বলেন, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা যৌথ বিনিয়োগে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ বলেন, সম্প্রতি সমুদ্রপথে দুই দেশের পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এ ধরনের ইতিবাচক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
এফপিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি সাকিব ফায়াজ মাগুন বলেন, দেশ দুটোর বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আরও জোরাদার করতে হবে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যকার পণ্য আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ যত বেশি হবে, পণ্যের মূল্য তত হ্রাস পাবে।
ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী দুদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে পাকিস্তানের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সেশনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ডিসিসিআই’র সদস্যভুক্ত শতাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ডিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।