ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মেয়াদের ইতি টানতে একটি ঐক্য সরকারে সায় দিয়েছে দেশটির উগ্র-ডানপন্থী দলের নেতা নাফতালি বেনেত্ত। রোববার (২০ মে) তার পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অবসান হতে যাচ্ছে।-খবর বিবিসি ও রয়টার্সের
নাফতালি বলেন, তার দল মধ্যপন্থী দলের নেতা ইয়ার লাপিডের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে আলোচনায় যোগ দিতে যাচ্ছে। একটি চুক্তি ঘোষণায় বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে ইয়ার লাপিডকে। তবে জোট গঠনের এই চুক্তি ইসরায়েলকে দুর্বল করে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু। টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বলেন, আমার বন্ধু ইয়ার লাপিডের সঙ্গে একটি জোট সরকার গঠন করতে আমি সবকিছু করতে রাজি আছি।
প্রস্তাবিত এই জোট ডান ও বামপন্থীদের একজায়গায় নিয়ে আসতে পারে। যদিও রাজনৈতিক ইশতিহারের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ব্যাপক মতানৈক্য রয়েছে। ইয়ার লাপিড নিজেকে মধ্য-বামপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকা উচিত। অন্যজন নাফতালি ধর্মীয় উগ্রপন্থী। তার মতে, ইসরাইলের উচিত অধিকৃত পশ্চিমতীরের অধিকাংশ দখল করে নেয়া।
ইহুদিবাদী দেশটির এই দুই বিরোধী রাজনীতিবিদের মধ্যে কার হাতেই নেতানিয়াহুর পতন ঘটতে যাচ্ছে। নতুন সরকারের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে জোট গঠন করতে পারেননি নেতানিয়াহু। যে কারণে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট চলে গেছে লেখক ও গীতিকার ইয়ার লাপিডের কাছে। ইসরাইলি ধর্মনিরপেক্ষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির হয়ে তিনি কথা বলেন। ৫৭ বছর বয়সী ইয়ার লাপিড সাবেক সংবাদ উপস্থাপক ও থ্রিলার লেখক। প্রচুর পপ গানের রচয়িতাও তিনি।
এখন তিনি তার পুরোপুরি বিপরীতে অবস্থান করা যুদ্ধংদেহী ধনকুবের নাফতালি বেনেত্তের সমর্থন পেলে সরকার গঠন করতে পারেন। ৪৯ বছর বয়সী নাফতালি সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডো। তিনি অবৈধ বসতি স্থাপনের একজন উগ্র সমর্থক। রাজনৈতিক মতাদর্শে দুজন পরস্পর বিরোধী হলেও নিজেদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন ইয়ার লাপিড ও নাফতালি বেনেত্ত। ২০১৩ সালে নতুন প্রজন্মের কণ্ঠ হয়ে তারা রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। নিজেদের প্রভাব ও শক্তিমত্তা নিয়ে নেতানিয়াহুর জোটে ভেড়েন।
এ দুজন কিছুদিনের জন্য নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় ছিলেন, তখন পরস্পরকে ‘ভাই’ বলে ডাকতেন। কিছুদিন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর লাপিড মন্ত্রিসভা ছাড়েন। এরপর আর ফিরে আসেননি। কিন্তু নাফতালি বেনেত্তে মন্ত্রিসভা ছাড়ার পর ভিন্ন ভূমিকা নিয়ে ফিরে আসেন। ২৩ মার্চের নির্বাচনে নেতানিয়াহুকে ঘিরে ভোটারদের কতটা মেরুকরণ হয়েছে, তা ভালোভাবেই দেখা গেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিচারের সময়েও রক্ষণশীলরা তাকে ছেড়ে যাননি। যদিও নিজের অপরাধের কথা অস্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু। করোনা মোকাবিলায় ইসরাইলের সফলতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচার হলেও নির্বাচনে আসন হারিয়েছে তার লিকুদ পার্টি।