কিন্তু এই জোটের অংশ হয়েও ভারতীয় পার্লামেন্টের প্রবেশদ্বারে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিবাদে অংশ নেয়নি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, গত মঙ্গলবারের মতো বুধবারও পার্লামেন্টের মূল প্রবেশপথ মকরদ্বারের সামনে আদানি ঘুষ-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত চেয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘ইনডিয়া’ মঞ্চ। এসময় ‘মোদি ও আদানি একই সত্তা’ বলেও স্লোগান দেয় তারা।
কিন্তু সেখানে আম আদমি পার্টি (আপ), আরজেডি, উদ্ধবপন্থি শিবসেনা, ডিএমকে হাজির থাকলেও যথারীতি অনুপস্থিত ছিল মমতার তৃণমূল কংগ্রেস।
মূলত পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই আদানি নিয়ে সংসদ অচলের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। মল্লিকার্জুন খাড়গের ডাকা বৈঠকেও হাজির থাকছে না তারা। কক্ষ সমন্বয়ে এসপিকেও সময়ে-সময়ে পাশে পাচ্ছে দলটি। আর তাই ইনডিয়ার মধ্যে ‘বিভাজনের’ এই সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছেন, “সংসদে বিজেপির কুকীর্তিকে প্রকাশ্যে আনার সার্বিক কৌশলের ক্ষেত্রে আমরা সবাই একজোট। তবে বিভিন্ন দলের সেই কৌশলকে বাস্তবায়িত করার বিভিন্ন উপায় থাকতেই পারে।”
কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে বুধবার কংগ্রেসের গৌরব গগৈ তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন। তবে সুদীপ তাকে জানান, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনাসহ সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত মোট ছয়টি বিষয় নিয়েই তারা সরব হবেন বলে তৃণমূলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে। এমতাবস্থায় তৃণমূলের পক্ষে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে বুধবার বিকেলেই বুলেটিন প্রকাশ করে ভারতের স্পিকারের অফিস বলেছে, মকরদ্বার অবরোধ করে কোনও কর্মসূচি যেন না হয়। কারণ, এর ফলে সংসদ সদস্যদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে, নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। এর আগে স্পিকার ওম বিড়লা লোকসভায় বলেন, নারী সংসদ সদস্যরা তার কাছে এ ব্যাপারে জানিয়েছেন।
কংগ্রেস অবশ্য পার্লামেন্টের ভেতরেই এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল। তবে বাকি বিরোধীরা পাশে না-থাকায় কংগ্রেস গত মঙ্গলবার সংসদ ভবনের মকরদ্বারে আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ করে। তৃণমূল অবশ্য সেদিনও কংগ্রেসের এই প্রতিবাদে যোগ দেয়নি।
মূলত আদানি ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কংগ্রেস লোকসভা ও রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি তুললেও তৃণমূল-সহ বাকি বিরোধীদের পাশে পায়নি। অচলাবস্থা কাটাতে বিরোধীদের মধ্যে এই বিভাজনকে কাজে লাগিয়েছে মোদি সরকার।
লোকসভায় বাংলাদেশ ইস্যু, উত্তরপ্রদেশের সামভালে মসজিদ ইস্যুতে মুসলিমদের হত্যার মতো বিষয় তুলতে দেওয়া হয়েছে। সংবিধান নিয়েও ১৩-১৪ ডিসেম্বর লোকসভায়, ১৬-১৭ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি মেনেছে মোদি সরকার।
কিন্তু ‘মোদির ঘনিষ্ঠ’ গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগকে ‘আমেরিকার ঘটনা’ বলে দাবি করে মোদি সরকার তা নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়নি।