গত দুই দিনে রাজধানী ও চট্টগ্রামে সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। কারণ এই সরকার ফেল করলে অভ্যুত্থান ফেল করে যাবে, বিপ্লব ফেল করে যাবে… আমরা আবারো সেই অন্ধকারে চলে যাব। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার মনে হয় আপনাদের পজিটিভ চিন্তা করা প্রয়োজন।’
রাজধানীর হোটেল লেকশোরে ‘তারেক রহমান: পলিটিক্স অ্যান্ড পলিসিস কনটেমপরারি বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন মির্জা ফখরুল। বইটির লেখক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, এটি প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ‘উড ব্রিজ’। অনুষ্ঠানস্থলে গ্র্রন্থটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
৫৭১ পৃষ্ঠার গ্রন্থে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জীবন-কর্ম-রাজনীতির নানা দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা বিষয় অত্যন্ত জরুরি বলে আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে একটা ভয়াবহ কাজ শুরু হয়েছে… যেটা হচ্ছে, সংবাপত্রের ওপর আঘাত, স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে আঘাত। যার জন্যে আমরা সব সময় সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তিনি প্রথম সংবাদপত্রকে মুক্ত করেছিলেন। সেদিন আমাকে বণিক বার্তার সম্পাদক বলছিলেন যে, আপনারা এই বিষয়টাকে জোরে বলেন না কেন যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ভোগ করেছে খালেদা জিয়ার সময়ে… বিএনপির সময়ে… এটা হচ্ছে বাস্তবতা।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যখন দেখছি, কিছুসংখ্যক হঠকারী, কিছুসংখ্যক উসকানিদাতা তারা বিভিন্নভাবে এই সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করবার চেষ্টা করছে, ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, যেটা কোনো মতেই সচেতন মানুষের, দেশপ্রেমিক মানুষের মেনে নেওয়া উচিত নয়। আমি অনুরোধ জানাব, সংশ্লিষ্ট সকলকে যে, অনুগ্রহ করে এই ভয়াবহ আত্মহননের কাছ থেকে সরে আসুন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করুন।’
‘ধৈর্য ধরতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সমস্ত কোমলমতি বালকেরা, ছাত্ররা তারা যে সমস্ত কাজ করছে, তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে…, এটা একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার…, এই সরকারের পক্ষে সব কিছু একসাথে করে ফেলা সম্ভব নয়। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে যাতে করে ন্যূনতম সংস্কারের পরে…। গতকাল তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, সংস্কার করতে হবে… আমরা সংস্কার বিরোধী নই। সংস্কার করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কেন নির্বাচনে যেতে চাই, এই কথা আমি বারবার বলেছি… নির্বাচন ছাড়া এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়, এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একমাত্র নির্বাচিত সরকারই পারে এই সমস্ত সমস্যা সমাধান করতে। অন্তত তার পেছনে যে জনশক্তি থাকে, যে ম্যান্ডেট থাকে, সেই ম্যান্ডেট নিয়েই সেটা তার পক্ষে করা সম্ভব হবে।’
‘তারেক রহমান: জীবন্ত ইতিহাস’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি প্রায় সবসময় এই কথাটা বলি যে, ইচ্ছা করলেই, চেষ্টা করলেই কাউকে ম্লান করে দেওয়া যায় না, উড়িয়ে দেওয়া যায় না… ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো, তিনি যুদ্ধ করতেন প্রথম দিকে… সেই যুদ্ধের সময়ে তিনি বাতিস্তার হাতে গ্রেফতার হলেন…, গ্রেফতারের পরে তার বিচার হলো। সেখানে ১২ বছর সাজা হয়েছিল। সেই সময়ে কাস্ট্রো বিচারকদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কনডেম মি ডাজেন্ট মেটার… হিস্ট্রি উইল এবজোরড মি… ‘আমাকে তোমরা এখন কনডেম করতে পারে, কিন্তু ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে।’
ফখরুল বলেন, ‘সেই ইতিহাস ধারণ করেছে জিয়াউর রহমানকে, বেগম খালেদা জিয়াকে, তারেক রহমানকে। ইনশাল্লাহ জীবন্ত ইতিহাস তারেক রহমান… আমাদেরকে আলোকিত বাংলাদেশে দিকে তিনি নিয়ে যাবেন, এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।’
সুদূর প্রবাসে থেকে দলকে সংগঠিত করে এবং দলের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তারেক রহমানসহ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটা পরিবারের ওপরে কী পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন হতে পারে, একটা ইয়াং সম্ভাবনাময় নেতা তার ওপরে কীভাবে নির্যাতন হতে পারে, তা এই জিয়া পরিবারকে এবং তারেক রহমান সাহেবকে না দেখলে আমরা বুঝতে পারব না। তার (তারেক রহমান) উপরে নিদারুণ নির্যাতন হয়েছে, শারীরিক নির্যাতন হয়েছে, মানসিক নির্যাতন হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘অথচ দেখেন এই নেতা তিনি কখনো থেমে যাননি এবং মাথানত করেননি। মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, মিথ্যা মামলায় বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো, তখন বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবে এটা অনেকের মনে চিন্তা ছিল। অনেকে ভাবছিলেন যে, আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এই দায়িত্ব নিতে পারবেন কি না। কিন্তু তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে অতি দ্রুত সমস্ত পার্টিকে সংগঠিত করে মহান একটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব অভ্যুত্থান ঘটাতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে যে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, তার মধ্যে যে অসাধারণ গণতান্ত্রিক মন আছে, আমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করছি, তারা সবসময় বুঝতে পারি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিক শফিক রেহমান, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, গবেষক মোবাশ্বর হোসেন, শরীফুল ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ,মাহবী আমিন, আনোয়ার হোসেন খোকন, সেলিম রেজা, শামা ওবায়েদ, আফরোজা আব্বাস, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, কূটনীতিক ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।