ইউরোপে আবারও পান রফতানির দুয়ার খুলল। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর নিষেধাজ্ঞা পর প্রথম দফায় দেশ থেকে বিমানে করে ইউরোপে পাঠানো হচ্ছে এক টন পান। বুধবার (২৬ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইউরোপে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পান রফতানি’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল ঢাকার শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নিষেধাজ্ঞার আগে ইউরোপে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১৮ হাজার ৭৮০ টন ও ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১৩ হাজার ২৫০ টন পান রফতানি হয়, যার মূল্য যথাক্রমে ৩৮ মিলিয়ন ও ৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
নিরলস উদ্যোগের ফলে ইউরোপে পান রফতানি আবার শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটি খুবই আশার কথা। ভবিষ্যতে পান রফতানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, কৃষিপণ্য রফতানির সম্ভাবনা অনেক। সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ইউরোপসহ উন্নত দেশে অন্যান্য কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়াতে উদ্যোগ অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা (গ্যাপ) বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব থেকে সনদ দেওয়া শুরু হয়েছে। ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। ফলে, আমরা আশা করছি, দেশের রফতানি বৃদ্ধিতে কৃষিপণ্য বিরাট ভূমিকা রাখবে ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এছাড়া, কৃষকও লাভবান হবেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে সাময়িকভাবে পান রফতানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা ধাপে ধাপে ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে ইইউ পান রফতানির ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত বেঁধে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে, পান সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হতে হবে, উৎপাদন হতে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ), গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইপপি), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব থেকে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সার্টিফিকেট দিতে হবে।
ইইউর শর্ত পূরণে বাংলাদেশ অনেকগুলো ব্যবস্থা নেয়। এর মধ্যে রয়েছে পান আবাদের এলাকা নির্বাচন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, উত্তম কৃষি চর্চার আলোকে কর্মসূচি নেওয়া ও বাস্তবায়ন, মনিটরিং, ট্রেসিবিলিটি বা শনাক্তকরণ, পানের স্যাম্পল টেস্ট, কৃষক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ, রফতানিকারকদের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিতভাবে পানের জমির মাটি ও পানি পরীক্ষা, রফতানি বাজারের জন্য নিরাপদ ও বালাইমুক্ত পান উৎপাদন নির্দেশিকা প্রভৃতি।
এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ইইউর আরোপিত শর্ত পূরণ করতে পারায় গত ১৫ এপ্রিল ২০২১ সালে পান রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এর ফলে আজ থেকে পান রফতানি আবার শুরু হলো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন ও বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ। নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পান উৎপাদন ও রফতানির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সামছুল আলম ও বিএফভিএপিইএর অ্যাডভাইজার মনজুরুল ইসলাম।