তথ্য বলছে— শুক্রবার গভীর রাতে তার পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন চাউর হলেও, পুলিশ অবশ্য পরদিন শনিবার মধ্য রাতে তাকে ধরতে চট্টগ্রামের হালিশহরের শান্তিবাগে স্ত্রী ইশরাতুন্নেসার বড় ভাই নুরুল হুদার বাসায় অভিযান চালিয়েছে।
৫ আগস্টের পর, যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভারতে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ওবায়দুল কাদের কলকাতায় পৌঁছেছেন। যদিও তারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, তবে আশপাশের কিছু সূত্র বলছে, তিনি ভারতেই আছেন।
অন্যদিকে, নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের শেষ ভাগে ওবায়দুল কাদের সিলেট বা ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত পাড়ি দেন। পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে দেশ ছাড়তে না পারায়, সীমান্ত এলাকাতেই কিছু সময় কাটান। তারপর ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে কলকাতা পৌঁছান। স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা তার সাথে যাননি।
ভারত যাওয়ার আগে, আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে কাদের গুলশান থেকে যশোর চলে যান। সেখান থেকে তিনি একজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন, যাতে কোনো সময় ভারতে চলে যেতে পারেন। গুলশানে এক বাড়িতে পূর্বেই আত্মগোপন করেছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, যিনি পরে ভারতীয় সীমান্তে মারা যান।
ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা কাদেরের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। এই নেতাদের অভিযোগ, কাদেরই সরকারের পতনের জন্য দায়ী। তারা বলছেন, যদি কাদেরের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে পরিস্থিতি বিব্রতকর হতে পারে।
ওবায়দুল কাদের সরকার পতনের সময় একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বিশেষ করে, “ছাত্র-জনতার আন্দোলন মোকাবিলায় ছাত্রলীগই যথেষ্ট” বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার পর থেকেই তিনি দলের ভেতর কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন, কিন্তু এরপর তিনি একেবারেই গুটিয়ে যান। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজের পুরো দায়িত্ব চলে যায় দলের অন্য নেতাদের কাছে।
তিনি তার দলের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন। ফোন ধরতেন না, নেতাকর্মীদের কাছে দুর্ব্যবহার করতেন। এমনকি, বিএনপির উদ্দেশে ‘খেলা হবে’ বলার পর সেই খেলা এখন তার পেছনে ছুটছে, এবং তিনি নিজেই এখন ‘নিখোঁজ’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদেরের বিরুদ্ধে চলত নেতিবাচক ট্রল। দামি ঘড়ি, কোট-টাই ব্যবহার এবং অদ্ভুত কিছু মন্তব্যের জন্য তিনি বারবার হাস্যরসের পাত্র হয়েছেন। তবে তার “পালাব না” মন্ত্র এখন ফাঁক হওয়া এক মজার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তিনি নিজেই এখন পালিয়ে আছেন। ফেসবুকে সক্রিয় থাকার বদলে তিনি এখন সেখানে থেকেও উধাও। এটা একদিকে যেন তার নিজেরই দেওয়া কথার প্রতি প্রতিশোধ। “পালাব না, কোথায় পালাব?”—অথচ এখন তিনি পালিয়ে আছেন, নিজেই একটা রহস্য হয়ে গেছেন।