গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সবুজ শিল্পবিপ্লবের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গড়ে উঠছে পরিবেশবান্ধব এসব শিল্প-কারখানা। দু’টি ব্লকে প্রায় এক হাজার একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা (গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলার মাধ্যমে এই বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। ‘ডেভলপমেন্ট অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অঞ্চলে পানির চাহিদা নির্ধারণের জন্য একটি বিশদ সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা যায় ২০৩১ সাল নাগাদ এখানে পানির চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক প্রায় ২৮ কোটি লিটার। বিপুল এ পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি সরবরাহ’ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (চট্টগ্রাম ওয়াসা) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। রোববার (৬ জুন) পরিকল্পনা কমিশনে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আপনারা সবাই জানেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পুরোপুরি চালু হলে এতে দেশের ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এই শিল্পনগরে যে আয় হবে সে আয় দিয়েই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে। শিল্পনগরে ২০৩১ সালে দৈনিক ২৮ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হবে। পানির বিশাল চাহিদা মেটাতেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে দোকান, দেওয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ কাটা, ৮৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘের পাইপ লাইন স্থাপনের কাজের ক্ষতিপূরণ। এছাড়া পরামর্শক সেবা, সরাসরি ব্যয়সহ ৫ দশমিক ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৪৭ এমএলডি (মিলিয়ন লিটার পার ডে) ইনটেক, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ৬০০ মিটার কনভয়েন্স পাইপ, স্টাফ কোয়ার্টার ও অফিস ভবন নির্মাণ, ৬৫ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন নির্মাণসহ দু’টি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, তিনটি সার্জ ট্যাক্ট, ৬৫ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, ২০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়াসার সুপেয় পানির উৎপাদন ক্ষমতা (১৪০ এমএলডি) বাড়ানো ও সীতাকুণ্ড এবং মিরসরাই এলাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে সুপেয় পানি সরবরাহের মাধ্যমে বাণিজ্য ও রপ্তানি সম্প্রসারণে সহায়তা বাড়ানো হবে। নানা কারণে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকর্মের মূল কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কারণে এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসেবে কাজ করে। দেশের প্রথম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি এই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শেষ তিন দশক ধরে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রামের উন্নয়নের গতি বেড়েছে, দ্রুত শিল্পের বিকাশ ঘটেছে বিশেষত পোশাক শিল্পে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলে পানি সরবরাহ সম্প্রসারণ করার এবং সেই অংশের শিল্প অঞ্চলগুলিতে বিশেষত মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে পানি সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) লক্ষ্য বাংলাদেশের সব সম্ভাব্য অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা। যার সূত্র ধরে মিরসরাই দেশের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর (বিএসএমএসএন) প্রকল্প।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রকল্প অঞ্চলটি চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি চট্টগ্রামের ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত যেখানে সরকারি, বেসরকারি এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে একটি শিল্পনগরীতে বিকশিত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের (বিএসএমএসএন) আয়তন প্রায় ৩০ হাজার একর।
এই শিল্প নগরীতে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের ক্ষেত্র হলো: পোশাক শিল্প, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, জাহাজ নির্মাণ, মোটরবাইক সংযোজন, ফুড ও বেভারেজ, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কাগজ শিল্প, হালকা শিল্প (অটো পার্টস ও বাই সাইকেল), ওষুধ, সৌর এবং বিদ্যুৎ। এ ধরনের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের মাধ্যমে এই শিল্পাঞ্চলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ কর্মসংস্থানসহ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি নিশ্চিত হবে। শিল্পনগরে বাড়তি পানির চাহিদা পূরণেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।