প্রতি বছর শীতের আগমনী বার্তা এলেই দল বেঁধে নাটোরের চলনবিলে পলো হাতে মাছ ধরতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন শৌখিন মাছ শিকারিরা। কিন্তু এবছর মাছ না পেয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে শৌখিন মাছ শিকারিদের। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে স্থানীয়রা পোনা ধরে ফেলায় বিলটি মাছশূন্য হয়ে পড়েছে বলে দাবি তাদের।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত চলে মাঝ ধরার এ কর্মযজ্ঞ। এর আগে সকাল থেকে বাস ও ট্রাকে করে রংপুর ও গাইবান্ধা থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষ হাজির হন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলে। বিলের শহরবাড়ি, কয়রাবাড়ি ও নিংগইন এলাকায় পলো নিয়ে তারা নেমে পড়েন মাছ মারতে। কিন্তু বেশিরভাগ শিকারি মাছ পাননি। ফলে হতাশা নিয়েই তারা ফিরছেন এলাকায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ি সদরের বাসিন্দা রশিদ জানান, ট্রাক ভাড়া করে ২৫ জন এসেছেন। প্রত্যেকের খরচ পড়েছে ১ হাজার টাকা। চার ঘণ্টা কয়রাবাড়ি এলাকায় পলো ফেলে তাদের ট্রাকের মাত্র দুজন দুটি ছোট বোয়াল পেয়েছেন। তিনি বলেন, এতদিন শুনেছি চলনবিল মাছের ঐতিহ্য। কিন্তু সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের রফিক বলেন, টানা পাঁচ ঘণ্টায় একটিও মাছ পাইনি। খালি হাতে ফিরছি। তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে উৎসবে অংশ নিতে পেরেছি এটিই বড় পাওয়া।
রংপুরের পীরগঞ্জের শামীম বলেন, সিংড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল নিয়ে পোনা মেরে নেওয়ায় চলনবিলে মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে বিলটি। সাড়ে তিন ঘণ্টা পলো ফেলে একটি বোয়াল মাছ পেয়েছি। স্থানীয় প্রশাসন এই জাল বন্ধ করতে পারলে চলনবিলে মাছের ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সভাপতি মোল্লা মো. এমরান আলী রানা বলেন, আগে চলনবিল বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভরপুর ছিল। এখন বর্ষায় তিন মাস পানি থাকায় মাছগুলো বড় হতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে। খালবিলে যত্রতত্র মাছ শিকার করাতেও কমেছে উৎপাদন। আগামীতে মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারলে চলনবিলের মাছের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, পলো নিয়ে গাইবান্ধা ও রংপুর থেকে কিছু শৌখিন মাছ শিকারি এসেছিলেন চলনবিলে মাছ শিকার করতে। তবে পানি বেশি থাকায় তারা আশানুরূপ মাছ শিকার করতে পারেননি।