বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের মিয়ানমারে ফেরতের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লেইং। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকার উৎখাতের পর ক্ষমতায় আসা এই জান্তা প্রধান প্রথমবারের মতো রোববার চীনা ভাষার ফোয়েনিক্স টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে সংশয় জানান।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের রাখাইন রাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে কি-না ফোয়েনিক্স টেলিভিশনের এমন প্রশ্নের জবাবে মিন অং হ্লেইং তাতে নিজের সন্দেহের কথা জানান। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, গণহত্যার অভিপ্রায়ে সেই সময় রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ফোয়েনিক্স টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিন অং হ্লেইং বলেন, এটা যদি মিয়ানমারের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে বিবেচনা করার কি আছে? আমি বিশ্বাস করি না যে— বিশ্বে এমন কোনও দেশ আছে যারা শরণার্থীদের গ্রহণের জন্য নিজের দেশের আইনের বাইরে যেতে পারে।
প্রায় চার বছর আগে রাখাইনে যখন অভিযান চালানো হয় তখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান ছিলেন মিন অং হ্লেইং। এই অভিযানে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের অনেকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করেন না।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে মিয়ানমারের স্বাধীনতা লাভের পর ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির উৎপত্তি হয়। মিন অং হ্লেইং বলেন, আমাদের স্বাধীনতা লাভের পর আদমশুমারিতে ‘বাঙালি’, ‘পাকিস্তানি’ এবং ‘চট্টগ্রাম’ শব্দগুলোও নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু কখনই ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। আমরা এই শব্দটিকে গ্রহণ করিনি।
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বহুকাল ধরে বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পাড়ি জমানো ‘বহিরাগত’ হিসেবে মনে করে তারা। যদিও এই রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ দেশটিতে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাসের শিকড় শনাক্ত করতে পারেন।
গত বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত করে মিন অং হ্লেইংয়ের সামরিক বাহিনী। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমালোচনা করলেও অং সান সু চিও সেই সময় সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরপরই মিন অং হ্লেইং বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু মিয়ানমার সেনাপ্রধানের এই ঘোষণার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কোনও ধরনের অগ্রগতির লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। যদিও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে সামরিক জান্তা সরকারকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলাগুলোতে বিশাল শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছেন। বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া দেখতে আগ্রহী বাংলাদেশ। নিজ দেশে তাদের ফেরত পাঠাতে প্রায়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছে ঢাকা।
চীনের সহায়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে পুনরায় আলোচনা শুরু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে রয়টার্স সোমবার খবর দিয়েছে।