জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, স্বৈরাচারী শাসন কখনো স্থায়ী হয় না, আওয়ামী লীগই তার প্রমাণ। তারা দেড় দশক ধরে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়ে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা থেকে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিয়েছে। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে টিকতে পারেনি।
রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা গোলাম রাজ্জাক। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বীরের জাতি। তাই আমাদের কেউ কখনো পরাভূত করতে পারেনি; আর কখনো পারবেও না। দেশে দীর্ঘ মেয়াদে ফ্যাসিবাদী এবং স্বৈরাচারী শাসন চলেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের শেষ রক্ষা হয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মোহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে আমাদের অনেক ত্যাগ ও কোরবানি করতে হয়েছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মাসুম, শিপন, মুজাহিদ, জসিম উদ্দীনসহ ৭ জনকে শহীদ করে লাশের ওপর নৃত্য চালিয়ে নির্মম পৈশাচিকা প্রদর্শন করা হয়েছিল। কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে শীর্ষনেতাদের হত্যাসহ শত শত নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, তাদের সব অপকর্ম জাতির সামনে তুলে ধরে আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করার বিকল্প নেই। তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনের উদ্বোধক শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা গোলাম রাজ্জাক বলেন, রিয়ান সব সময় শহীদ হওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। আল্লাহ তাকে সে মহান মর্যাদা দান করেন। আমি-আমরা তার জন্য গর্বিত। তিনি শহীদ রিয়ানের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূর্ণতা দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সম্মেলনে ২৮ অক্টোবর ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহতরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ১০ হাজার ডেলিগেট অংশ গ্রহণ করেন।
সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ।