ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব ক্ষেত্রে ভঙ্গুর অবস্থা স্বাভাবিক করতে শুরু থেকেই হিমশিম খাচ্ছে সরকার। তবে জাতির ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নেওয়া এই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে রেখে গিয়েছিল, তা গত দুই মাসে কিছুটা কমে এলেও কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়।
এই সরকার দ্রব্যমূল্যে লাগাম টানতে সক্ষম হবে বলে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল সেটার বাস্তবায়ন হয়নি গত দুই মাসে। এতে জনসাধারণের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় বাজারে লাগাম টানতে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিচ্ছে নানা উদ্যোগ।
সরকার কিছু নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রতিফলন নেই। কিছু কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স করেছে সরকার। যদিও এই টাস্কফোর্স বাজার নিয়ন্ত্রণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে সেটা নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সরকার টাস্কফোর্সের যে কার্যপরিধি নির্ধারণ করেছে তাতে বলা হয়েছে- টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, বৃহৎ আড়ৎ/গোডাউন/কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে। উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যাতে দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে তা নিশ্চিত করবে ও সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে তারা।
প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত এ টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠাবে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেকে আপসেট। সেদিকে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির জন্য সাত প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর মিলে দুটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তারা বাজার মনিটরিং করছে। অনিয়ম হলে জরিমানা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় ১০ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। সেখানে দুজন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকবে। খুব তাড়াতাড়ি এটা কন্ট্রোলে চলে আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্মসচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং এটাই এখন বড় সমস্যা। এর সমাধানে আরও পরিকল্পিতভাবে কাজ করতেই আমরা টাস্কফোর্সের প্রজ্ঞাপন জারি করেছি এবং তখন থেকেই এটা কার্যকর। এখন তারা (টাস্কফোর্স) নিজেরা বসে বাজার তদারকি করবেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলেন, দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বর্ষা-বন্যার কারণে দাম হয়ত কিছুটা বাড়ত। কিন্তু যেভাবে বাড়ানো হয়েছে সেটা কারসাজি। আশা করছি টাস্কফোর্সের মনিটরিং শুরু হলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
তবে অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, বাজারের সংকট অনেক গভীর এবং ছোটখাটো যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে আপাতত কিছুটা লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভ হবে না। টাস্কফোর্স যদি জেলা পর্যায়ে কার কাছে কোন পণ্য কতটা মজুত আছে সেই তথ্য নিতে পারে। এটা করে মজুত রেখে মুনাফার চেষ্টা কিছুটা কমতে পারে।